কামরুল হাসান কামু
আমরা তো ভাই মধ্যবিত্ত,
লজ্জা ভীষণনিজের ঘরে
নিজের ভেতর হচ্ছি পেষণ।
আমরা তো ভাই মধ্যবিত্ত,স্বভাবে চাপা
পেটের মাঝে আগুনে ক্ষুধা
মুখটা থাকে আঁচল দিয়ে ঢাকা।
আমরা তো ভাই মধ্যবিত্ত,কারো কাছে হাত পাতিনা
তোমরা ভাবো,অনাহারে কেউ থাকিনা
এদিক ওদিক ঘুরছে যখন,ত্রাণের গাড়ির চাকা
আমাদের এই বাড়ির পথটা তখন,থাকছে শুধু ফাঁকা।
টিভিতে দেখি লম্বা লাইন,খাবার দিচ্ছো মাথাগুনে
আমরা তো ভাই,উপোস আছি আমাদের কথা কেবা শুনে?
মেয়ের সম্মানে দিইনা পা ঐ দিকেতে,
ছেলের কথাই হাত বাড়াইনা ঐ দিকেতে,
আমরা তো ভাই,উপোস থাকি
আমাদের কথা কেবা শুনে?
আমরাতো ভাই,ভিখিরি নই,পরিস্থিতির স্বীকার,
কর্মহীন হয়ে আমরা,থাকছি ঘরে বেকার।
লাজলজ্জা সমাজজীবন,খিল দিয়েছে বুকে
মানুষ যদি না আসে ভাই,মরবো ধুকে ধুকে।
আমাদের আকাশখানা ঢেকে যাচ্ছে ঘুটঘুটে কালো মেঘে,
আমাদের বাড়ির ভেতরে বিষণ্ণ কবুতর অস্ফুট স্বরে ডাকে,
তুলবার ব্যর্থতায় মাঠের শস্যদানা আউলা বাতাসে ঝরে,
চোখের কাজল ভিজে উঠলে,পাথরচাপা রাত ছেয়ে যায়
মধ্যবিত্ত ঘরে।
করোনা মহামারি,চিঠি লিখছি স্তব্ধতার অক্ষরে,
লম্বা চিঠি…
বুকের নালায় তখন দুঃখের জিওলমাছে ঘুপটি মেরে আছে,
চিঠি লিখছি তো লিখছি,
চোখের জলে অক্ষর ভাসে,
ক্ষুধার্ত অক্ষর আঙুলে আঙুলে,
ক্ষুধার্ত অক্ষর উদরের দেয়ালে দেয়ালে,
ক্ষুধার্ত অক্ষর ঝুলছে শিশু ও বৃদ্ধের ঠোঁটে,
ক্ষুধার্ত অক্ষর ঝুলছে গবাদিপশুর গ্রীবা ও চোখে,
পোস্ট করবার লোক নেই,কোথাও কেউ নেই
অজস্র চিঠি রাখা আছে বুকপকেটে।
অনেক দিয়েছি মাঠে,অনেক দিয়েছি রাষ্ট্রের কোষাগারে,
হাত দুটো আমাদের ফাঁকা এখন,কাঁদছে শিশু চুপে,
হাড় খুয়েছি সবুজ ফসল চাষে,
বছরজুড়ে তোমরা পাবে,আমাদের এই মৃতপ্রায় জীবন শেষে।