ফারুক আহমেদ
সাগরের আজ মন ভাল নেই, কারণ মায়াবী হাসি দুইদিন ধরে কথা বলছে না। ওয়াও হাসি মেসেজ পাঠিয়েছে, এখনই বোটানিক্যাল গার্ডেন এ যেতে হবে! এই রিকশা, বোটানিক্যাল গার্ডেনে চলো, তাড়াতাড়ি চলো। ওই যে হাসি বসে আছে গাছের নিচে!
হাসি: সাগর তুমি আসতে এত দেরি করলে কেন, সেই কখন থেকে আমি বসে আছি তোমার জন্য?
সাগর: কই, আমিতো কোথাও দেরি করিনি, তোমার মেসেজ পাওয়ার সাথে সাথেই আমি চলে এলাম।
হাসি: বুঝেছি, বলেই মুখটি আবার ভার করল!
সাগর: আচ্ছা হাসি, তুমি দুইদিন ধরে মন ভার করে আছো, আমার সাথেও কথা বলছো না, এটা কিন্তু আমার একটুও ভাল লাগছে না। তোমার বান্দবী শেফালী বিয়ে করে আমেরিকা চলে গেছে তাতে কি হয়েছে? আরে আমি আছি না তোমার পাশে? হাহাহাহা আমিও কানাডাতে ইমিগ্রেশন এর জন্য এপলাই করেছি ইন্টারভিউও হয়ে গেছে, ইমিগ্রেশন অফিসারতো আমাকে বলেই দিয়েছে, ওয়েলকাম টু কানাডা মিস্টার সাগর এন্ড জাস্ট ওয়েট ফর ফিউ ডেজ। কানাডাতে ইমিগ্রেশনটা হয়ে গেলেই তুমি-আমি একসাথে কানাডাতে চলে যাবো, বুজলে। ও হ্যা শোন, বিয়ের কাজটাও আমরা এরই মাজে সেরে ফেলবো !
জান হাসি, গতবার আমি অফিস থেকে বিসনেস ট্রিপে কানাডাতে যাওয়ার পরই কানাডা আমার ভাল লেগে গেছে! কত সুন্দর দেশ, মানুষ গুলোও কত ভাল, ওখানে একজন আরেক জনকে স্যার ছাড়া কথাই বলে না, বাসে বসলে অন্যের ডিসটার্ব হবে মনে করে বাসে কেউ মোবাইল ফোনে কথাও বলে না।
টরোন্টোর অনেকগুলো টাউন এ আমি গেয়েছি, তবে আমার ভালো লেগেছে “ক্রিসেন্ট টাউন” কারণ বেশির ভাগ বাংলাদেশিরা সেখানেই থাকে। আর তুমি যখন ক্রিসেন্ট টাউনের পাশে “ডানফোর্থ এভিনিউতে” যাবে, দেখবে অনেক দোকানের মালিকই বাংলাদেশি, যেখানে ঢাকার ডাল-পুরি থেকে শুরু করে ঢাকার চটপটিও পাওয়া যায় ওখানে। দেখলে মনে হবে এ যেন আর এক টুকরো বাংলাদেশ !
মার্কেটের মাঝে আমার সব চেয়ে ভাল লেগেছে “ইটন সেন্টার”, ওখানে অনেক গুলো সিনেমা হল আছে। সেই হলে গিয়ে টাইটানিক ফিল্মটা টা দেখাও ছিল আমার কাছে অনেক মজার। হাই পার্ক, নায়েগ্রা ফলস, অন্টারিও লেইক, ওয়ান থাউজেন্ট আইল্যান্ড ছাড়াও আরো আছে কত সুন্দর জায়গা! তুমি যখন সেখানে যাবে তোমাকে আমি সব জায়গাতে নিয়ে যাব, এক সাথে আবারও দেখব টাইটানিক ফিল্মটি তুমি আমি দুজনে মিলে ।
কানাডা এক সময় ছিল অনেক বোরিং, এখন আর তা নাই। গেলেই দেখবে আমাদের মত কত প্রফেশনাল বাংলাদেশি কানাডাতে, ওখানে না গেলে তা বুঝবেই না। ওখানে আছে বর্তমানে ১ ডজনের ও বেশি বাংলাদেশি অর্গানিজশন তার মধ্যে BCCB আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আমরা ওখানে যাওয়ার পড়ই তুমি তার মেম্বার হয়ে যাবে, দেখবে BCCB মেম্বাররা কত ভাল এবং পেয়েও যাবে তোমাদের কুমিল্লার অনেক ভাই বোনদেরকে, তখন তোমার কাছে কানাডাকে বিদেশ মনেই হবে না। মনে হবে প্রবাসে এ এক লিটল বাংলাদেশ।
অনেকতো কথা হলো, এবার চলো ওই শান্তির পায়রার কফি হাউজে একটু বসি। ওহ! কত দিন হল তোমার সাথে বসে কফি খাই না……..!
সাগর আর হাসি শান্তির পায়রা কফি হাউজে ঢুকতেই দেখতে পেল সামনের এক বড় টেবিলে এক ঝাঁক বন্ধুরা বসে বসে গল্প করছে। সাগর ও হাসিকে দেখে সবাই মনের খুশিতে দাঁড়িয়ে গেল, আর বলতে লাগলে আরে তোমরা এখানে !
সাগর ও হাসি: সাগর ও হাসি এক সাথে জিজ্ঞেস করে উঠলো কি ব্যাপার তোমরা সবাই এখানে ?
সবাই: এক সাথে বলে উঠল, এই শীতে আমরা সবাই সেন্টমার্টিন আইল্যান্ডে পিকনিক এ যাচ্ছি, এর জন্যই মিটিং চলছে, আসো আসো বস আমাদের সাথে হাহাহাহা !
সবার এক সাথে হাসি দেখে “হাসিও” হাসতে শুরু করল ।
সাগর: কি ব্যাপার, হাসি হাসছো কেন, কি এবার তোমার মনটা ভাল হয়েছে তো, আর মুখ ভার করে থাকবে না তো ?
হাসি: সাগর, তুমি আজ আমার মনটাই ভাল করে দিলে। থ্যাঙ্ক ইউ সাগর, তুমি সত্যি অনেক ভাল, আই লাভ ইউ সাগর । (এই বলেই, হাসি সবার সামনে সাগরকে জড়িয়ে ধরে ………….!)
সাগর: এই এই হাসি তুমি কি করছো, তুমি সবার এইসব কি করছো …………….!
হাসি: ও কিছু না সাগর, আজ তুমি আমার মনটাই ভাল করে দিলে, লাভ ইউ সাগর, লাভ ইউ ভেরি মাচ !