-মিলি সুলতানা
“আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এদেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:¯^প্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়”?—-রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র কবিতার লাইনগুলো আজো আমাদের চেতনাকে রক্তাক্ত করে। একুশে ফেব্রæয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটি বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের একাধারে মর্মান্তিক ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন। ১৯৫২ সালের এইদিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৯) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাই এইদিন শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
ইংরেজি ভাষা শুধু একটি বিশ্বজনীন ভাষা নয়, বর্তমান বিশ্ব প্র¶াপটে মার্কেট ইকোনমির ভাষা। এর প্রয়োজনীয়তা অন¯^ীকার্য। সুতরাং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে ইংরেজি ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু কষ্ট হয় যখন দেখি বর্তমান প্রজন্ম ইংরেজি শি¶ার নামে বাংলাকে উপে¶া করছে। কথা বলতে গিয়ে ভাষার শ্রæতি-মাধুর্যতা নষ্ট করে ফেলছে। কথার মাঝে মাঝে দুই একটি ইংরেজি ঢুকিয়ে দেয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইংরেজি বলতে পারলে নিজেকে শি¶িত ও অভিজ্ঞত বলে মনে করে। অনেকেই হিন্দি শব্দ ব্যবহার করছে। ইংরেজি বা হিন্দি শেখা কোনো অন্যায় নয়। কিন্তু বাংলার মধ্যে হিন্দি বা ইংরেজি মিশিয়ে জগা খিচুড়ি করে বাংলাভাষাকে ¶তিগ্রস্ত করা অন্যায়।
পৃথিবীতে বর্তমানে কম-বেশি পাঁচ হাজারের মতো ভাষা রয়েছে। ২০০৪ সালে ইউনেস্কোর হিসাবে বাংলার স্থান চতুর্থ। বিশ্বের হাজারও ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার এ অবস্থান নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা ভাষার রচিত তিনটি গান তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত। দেশ তিনটি হল বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা। ২০১০ সালে ইউনেস্কো চার মাসব্যাপী একটি অনলাইন সার্ভে করেছিল। তাতে দেখা গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রæতিমধুর জাতীয় সঙ্গীত হচ্ছে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত এবং বাংলা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ভাষা। দ্বিতীয় স্থানে স্প্যানিশ এবং তৃতীয় স্থানে ডাচ ভাষা। যদিও যার যার মাতৃভাষা তাদের কাছে মধুরতম ভাষা।
কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রæয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রæয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়।
ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই পদশ আমরা পেয়েছি। যে দেশের আলো বাতাসে আমরা ¯^াধীনভাবে বড় হয়েছি। ¯^াধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয়-এই শব্দ তিনটির সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। শব্দগুলো বাদ দিলে আমাদের পরিচয় যেন ম্লান হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের দেশপ্রেম বা ¯^দেশপ্রেমের ব্যাপারটি যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ করি, তাহলে বছরের প্রতিটি দিনই বিজয় দিবসের চেতনা মনে করতে পারব। আমাদের নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলোও তখন ভালোভাবে করতে পারব। প্রত্যেক মানুষ তার অবস্থান থেকে নিজের দায়িত্বটা ভালোভাবে সম্পন্ন করার মধ্যেই দেশপ্রেম প্রকাশ করতে পারে।
সাংবাদিক, কলামিস্ট, নিউইয়ক