এবিএম সালেহ উদ্দীন
মা । এক অক্ষরের একটি শব্দ। কিন্তু তাৎপর্য ব্যাপক। জগতে মায়ের সাথে অন্য কেউ তুলনীয় নয়। মায়ের সাথে সন্তানের যত স্মৃতি অথবা সন্তান নিয়ে মায়ের অমলিন স্মৃতির কোন তুলনা হয়না। সন্তানের যেকোন বিপদের আগাম দ্রষ্টা মা। অতুলনীয় মমত্ববোধ এবং ভালোবাসার অনুভব ও উপলব্ধিতে মা সন্তানের সমূহ বিপদ সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারেন। এ সম্পর্কে বাংলায় একটি চিরন্তণ প্রবাদ হচ্ছে- “পাড়া-পরশীর সবার চেয়ে আগে জানেন মা”। আমাদের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কিংবা জীবনের প্রতি পরতে মায়ের জীবদ্দশার কত স্মৃতি হৃদয়ে বহমান। তেমনই আমার কিশোর বেলার এমন অনেক স্মৃতি সর্বদাই চোখে ভাসে। বাড়িতে এত মানুষভরা কোলাহলের মধ্যে পড়ালেখা হবে না। তাই আমাকে প্রথমে গজারিয়া বাজারের একটি ঘরে এবং পরবর্তীতে ভোলায় থাকতে হয়েছে। সেই কারণে বারো বছর বয়স থেকেই আমি আমি বাড়ি ছাড়া। প্রথমে বাবা বুঝায়ে-শোনায়ে আমায় রেখে যেতেন। কিন্তু একদম মন বসতো না। মায়ের স্নেহ পরশের আশায় আকুল হয়ে থাকতাম। শৈশবের বন্ধুজন ও মায়ের টানে প্রায়শ:ই সপ্তাহের ছুটিতে বাড়ি চলে আসতাম। ভোলা শহর থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ির দূরত্ব চলিশ মাইল।
কাঁচা রাস্তায় রিক্সা অথবা পায়ে হেঁটে বাজারে এসে বাস ধরতে হতো। গজারিয়া বাজার থেকে বাস চেপেই ভোলা যেতে হতো। তেমনই ভোলা থেকে লঞ্চ অথবা বাসে করে বাড়ি আসতে হতো। আমি সপ্তাহের ছুটিতে প্রায়ই বাড়ি চলে আসতাম। এতে আমার মা সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। নানা রকমের ভালো খাবারের আযোজন হতো। আবার চলে যাওয়ার সময় মা বিমর্ষ হয়ে হয়ে পরতেন।
একবার বৈশাখের ছুটি শেষে ভোলার রওয়না করবার প্রাক্যালে মা’র কাছে বিদায় নিতে গেলে তিনি কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে গেলেন। মা কাতর স্বরে বললেন- ‘আমার মনটা কেন যেন আনচান করছে। মেঘলা আকাশ। তুই বাবা আজ না গেলে হয় না? বৈশাখী ঝড় হতে পারে। আমি বললাম মা আপনার দোয়া থাকলে কিচ্ছু হবে না। বাড়ি থেকে বড় (কাঁচা রাস্তা) রাস্তায় উঠতে এবং গজারিয়া পর্যন্ত রিক্সায় যেতে হতো। যদিও বেশির ভাগ মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটেই সবখানে যেতে অভ্যস্ত। এক্ষেত্রে বাবা কখনো আমার ছাত্রজীবনের খরচপাতি দিতে দ্বিধা করতেন না। গ্রামে রিক্সা খুউব একটা ছিল না বিধায় বাবার নির্দেশ মত পূর্বথেকেই রিক্সা ঠিক করা থাকত। মায়ের বিষন্নতার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম। রিক্সা বাড়ির খোলা দরজা পাড় হয়ে ততক্ষণে রাস্তায় হলে এসেছে। আমি দেখলাম, মা আমার কাছারির পার্শ্বঘেষে দাঁড়িয়ে অভাগা সন্তানের দিকে সুৃগ্ধি নয়নে তাঁকিয়ে আছেন।
উভয়ের হাত নাড়তে নাড়তে একসময় অদৃশ্য হয়ে গেলাম।
গজারিয়া প্যেঁছনোর একটু আগেই বাস ছেড়ে গেল। এরইমধ্যে শৈশবের বন্ধু আয়ুব ও ঝন্টুর সংগে দেখা। বসে গেলাম মিস্টিান্ন ভান্ডারের (আবু’র চায়ের দোকান) চায়ের আড্ডায়। ঘণ্টাখানেক পর শেষ বিকেলের বাস এসে গেলো। পরিচিত ড্রাইভার। তিনি আমার জন্য সামনে একটি সিট ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই আমলের বাসের নিত্যকার ঝাঁকুনিভরা জার্নিতে দীর্ঘ রাস্তার উপর বাজার কেন্দ্রিক স্টেশন সমূহে পর্যায়ক্রমে গাড়ি থামছে। যাত্রিরা উঠানামা করছে। চলন্ত গাড়ি থেকে সম্মূখপান আর দুইদিকের পথ-প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার চোখ। গ্রাম থেকে গ্রামের দূরস্থিত সাড়িবদ্ধ গাছ-গাছালি, ছায়াঘেরা সবুজে আকীর্ণ বন-বনানী আর শনশন বাতাসের শব্দতরঙ্গে হৃদয়ে বাজছে কত রকম গান। মনের অজান্তেই গাইছি- ‘গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ আমার মন ভুলায় রে/ ওরে কার পানে মোর হাত বাড়িয়ে/ লুকিয়ে যায় ধুলায় রে আমার মন ভুলায় রে,,,’ অথবা ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল / বাতাসের আছে কিছু গন্ধ , রাত্রির গায়ে জ্বলে জোনাকি তটিনের বুকে কিছু ছন্দ’।
এরই মধ্যে আমাদের বাস এসে পৌঁছেছে বুরহানুদ্দীন বাজারে। এখানে তিরিশ মিনিটের বিরতি। সবাই হুড়োহুড়ি করে নামছে আমিও আরেক বন্ধুসহ বাস স্টান্ডের জমজমাট রেস্টুরেন্টে আবারো চায়ের আড্ডায় মত্ত হয়ে গেলাম। যা কিছুই করছি আমার মন বারবার উড়ে যাচ্ছে হাসানগঞ্জে। আমার মায়ের কাছে। চোখের সামনে ভেসে উঠেলো মায়ের বিচলিত চোখ। মনে হয় এখনো মা আগ-দরজায় দাঁড়িয়ে স্বার্থপর পুত্রের পথপানে তাঁকিয়ে আছেন।
চা শেষ হয়নি। বন্ধুকে বললাম তুই থাক আমি গেলাম। বাসে উঠে ব্যাগটি নিয়ে ড্রাইভারকে বললাম, চাচা আমার সিটে অন্য কেউকে বসতে দিয়েন। উল্টোদিকে চরফ্যাশন অভিমুখি আরেকটি বাস দাঁড়ানো। প্রায় সব বাসের ড্রাইভার ও হেলফার আমাকে চিনেন। ড্রাইভার চাচা কৌশলে আমার জন্যে সামনে তাঁর আয়ত্বে রাখা রিজাভ সিটটি আমাকে দিলেন। আমার স্টেশনে যখন নামলাম,তখন রাত দশটা। গজারিয়া বাজারের কোলাহল শেষে নিভু নিভু ভাব। খুব একটা কোলাহল নেই। আবারও আবু’র চায়ের দোকানে বসে মুড়ি দিয়ে চা পান করছি।
ওখানে বসেই খবর পেলাম বাংলাবাজরের কাছে (ভোলা থেকে আট মাইল দূরে) একটি বাস এক্সিডেন্ট হয়েছে হতাহতের সংখ্যা অনেক। আমি যে বাসে গিয়েছিলাম সেই একই বাস!
বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। মন চাইলো আবারো ছুটে যেতে সেই বাসের দিকে। জানিনে আমার সংগের সেই চেনা-অচেনা যাত্রিরা কে কেমন আছেন।
রাত বাড়ছে। এরই মধ্যে বাড়ির কাছের রিক্সাও পেয়ে গেলাম। বাড়ি পৌঁছলাম রাত বারোটার দিকে। আমায় দেখে অবাক-বিস্ময়ে মা কতটা খুশি হয়েছিলেন তা বুঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। নিজের মা বিষয়ক গল্পের আপাতাত: এখানেই সমাপ্তি।
মা অতুলনীয়। মহান আল্লাহ সব কিছুর উর্দ্ধে মাকে সন্মান জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বনবী (দ:) বলেছেন-“মা হচ্ছেন সমগ্র জাহানের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত। মাকে কখনও কষ্ট দেয়া যাবে না, অসন্মান করা যাবে না।” তিনি আরো বলেছেন- “পৃথিবীতে সবচেয়ে সে-ই নিকৃষ্ট, যে তার মাকে কষ্ট দেয়। যে মাকে অসন্মান করে(?) সে অবশ্যই অভিশপ্ত।”
সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা অকৃত্রিম। পৃথিবীর কোন কিছুর সঙ্গে মায়ের মায়া-মমতার তুলনা হয় না। হাদিসে আছে- ‘মায়ের পদতলেই সন্তানের বেহেস্ত।’ অতএব মর্যাদাগত ভাবে দুনিয়া-জাহানে মায়ের সমকক্ষ আর কেউ নেই এবং হতে পারে না।
বিশ্বচরাচরে মায়ের মর্যাদাকে উচ্চকিত রাখার তাগিদ হচ্ছে মানবধর্মের অন্যতম শিক্ষা। সবারই একই কথা মাকে যেনো অবহেলা না করা হয়। এটি মহা অপরাধ। মাতা-পিতার সন্মান ও মর্যাদা রক্ষার তাগিদে পৃথিবীর সকল ধর্ম এবং মনীষীদের অনেক উক্তি আছে।
এ মুহুর্তে রাধারানী দেবীর একটি উক্তি মনে পড়ছে- “মা… মা-ই। মায়ের সাথে পৃথিবীর আর কিছুর তুলনা চলে না।” এ ব্যাপারে নিপোলিয়ানের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। তিনি বলেছেনÑ “একটি দেশের পুনরুজ্জীবনের জন্য বিশেষ কিছুরই দরকার হয় না, কেবল মাত্র দরকার হয় কিছু সংখ্যক সু-মাতার।”
পৃথিবীতে সৌভাগ্যবান তিনি,যিনি মায়ের আদর, মায়া-মমতা ও স্নেহ-পরশে বড় হয়েছেন এবং মাকেই সবকিছুর উর্দ্ধে মর্যাদা দিয়েছেন। আবার এমন অনেক সন্তান আছেন, যারা শিশুকালে মা হারিয়েছেন। মায়ের আদর ও স্নেহ বঞ্চিত হয়েছেন কিন্তু বড় হয়ে কখনো মাকে ভুলে যান নি।
মহানবীর চিরকালের নির্দেশনা হচ্ছে ‘জগতের সকল মায়ের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ-অসিদ্ধ সন্তানই দুর্ভাগা এবং সে অভিশপ্ত।’
মায়ের দু:খ-কষ্ট ও বেদনা মোচনে সর্বাগ্রে সন্তানকেই এগিয়ে আসতে হবে। মাকে অসন্তষ্ট রেখে কিংবা অবহেলা করলে দুনিয়ায় অভিশপ্ত জীবন আর পরকালে ক্ষমাহীন কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
এ পৃথিবীর কোন কোন মা সন্তানের নিকট থেকে অবহেলার শিকার হয়েছেন। মা অভিশাপ না দিলেও পাপিষ্ট সন্তানের ভাগ্যে জুটেছে জগতধিকৃত অভিশাপ নিয়ে নি®প্রদীপ ধিকৃত জীবনপাতের ঘটনা।
বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (র.) এর শিশুকালের একটি ইতিহাস বিখ্যাত ঘটনা। একবার রাতে তাঁর মা শুয়েছিলেন এবং শিশুর কাছে পানি চাইলেন। শিশু আ: কাদের পানি নিয়ে এসে দেখেন মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পানির গøাস হাতে দাঁড়িয়ে রইলেন। রাত পোহানোর আগে মা ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার সন্তান পানির গøাস হাতে নিয়ে কম্পিত শরীরসহ দন্ডায়মান! সারা রাত শিশু বাচ্চাটি পানি হাতে দাঁড়িয়েছিলেন! এ দৃশ্য অবলোকন করে মা তো হতভম্ব। শিশুটির তুলতুলে পা দু’টি ফুলে গেছে এবং সারা শরীর কাঁপছে। বাচাধনকে বুকে টেনে মা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। মায়ের ঘুমের বেঘাত হবে, কষ্ট হবে ভেবে মাকে জাগাননি। মহীয়সী মায়ের দোয়ায় তিনি জগদ্বিখ্যাত।
তেমনি মমতাময়ী মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এক মহা দুর্যোপূর্ণ ঝড়-বৃষ্টির ঘোরতর অন্ধকার রাতে একটি বিরাট স্রোতবাহি নদী সাঁতরিয়ে পার হয়ে কঠিন কষ্টের মধ্য দিয়ে মায়ের সান্নিধ্যে পৌঁছে জগদ্বিখ্যাত হয়েছিলেন। মায়ের প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ববোধের এমন বহু দৃষ্টান্ত আছে।
সন্তানের সুখের লাগি মায়ের ত্যাগ ও কষ্টের কোন তুলনা নেই। সমগ্র জাহানের কোন কিছুর সঙ্গে মায়ের অবদানের তুলনা করা যাবে না।
অতএব মাকে কখনও অবজ্ঞা করা যাবে না। অসন্মান করা যাবে না। মায়ের অধিকার রক্ষা করেই মহত্ব অর্জন করতে হবে। কারণ পৃথিবীতে মহৎ মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে একজন সুমাতার অবদানই সবচেয়ে বেশি। শ্রেষ্ঠ মানুষেরা কখনো তাদের মাকে অমর্যাদা করেননি।
পৃথিবীতে মা নিয়ে যত গল্প-কবিতা ও গান আছে। মায়ের মর্যাদা রক্ষার তাগিদ আছে। আর কিছুতে তা নেই। সকল ভাষা, সকল ধর্ম আর সকল জাতির মুখে মা নামটি একযোগে যেমন উচ্চারিত হয়। তেমনটি আর কিছুতে হয় না। জগতে একমাত্র মায়েরই কোন প্রতি শব্দ নেই। মা… মা-ই। সবাই সকল ভাষায় মাকে মা বলেই ডাকেন। মায়ের সন্মান ও মর্যাদার জন্য এমন দৃষ্টান্ত আর কিছুতে নাই।
সূর্য যেমন অনন্তকাল পৃথিবীতে আলো ছড়ায়; তেমনি মায়ের মমতা ছেয়ে থাকে সমগ্র বিশ্বময়।
মায়ের শুন্যতা কোন কিছুতেই পুরণ হবার নয়। আমরা যারা মা হারা তারা মায়ের মর্ম চিন্তা উপলব্ধি করে ব্যকুল-বিষন্ন হয়ে উঠি। শয়নে-স্বপনে সর্বদা মাকে খুঁজি। কিন্তু মাকে পাই না। কিন্তু যাদের মা আছেন, তারা তাদের সৌভাগের পরশকে আরো মহিমান্বিত করতে পারেন মায়ের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে। মায়ের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করে,পরম যতেœ মাকে সঙ্গে রেখেই ধন্য হতে পারেন। নিজের জীবনের আলোকমালা দিয়ে সমাজকে করে তুলতে পারেন সমুজ্জ্বল ও আলোকিত।
কখনো কোন অবস্থাতেই যেনো আমরা আমাদের মাকে ভুলে না যাই। মায়ের স্মৃতিছায়া আর মমতা-মায়ায় সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। এ মুহুর্তে আঠারো শতকের কবি জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের দু’টি লাইন মনে পড়ছেÑ“জাগ জাগ সবে ভারত সন্তান/ মাকে ভুলি কতকাল রহিবে শয়ান।” মায়ের প্রতি যারা অবজ্ঞা করে তাদের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের পঙ্কজিনী বসু নামে এক বালিকা কবি আঠারো শতকে লিখেছিলেন: “নাহি লজ্জা, নাহি ভয়/ মা’য়ে সবে ‘দাসী’ কয়/তবু ঘুমায়ে আছ, তোরা কুলাঙ্গার।” মাত্র ষোল বছর বেঁচেছিলেন তিনি। তেমনি মানবতার মা তেরেসাঁ সমগ্র বিশ্বে খ্যাতিমান হয়েছিলেন মা হারা এতিম সন্তানদের লালন-পালন ভরণ-পোষণ এবং মানুষ করবার দায়িত্ব পালন করে। মায়ের শুন্যতা উপলব্ধির মধ্য দিয়ে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে সমাজের অনাথ,দুস্থ-অসহয়ায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্য দিয়ে পূণ্যময়তা অর্জন করতে হবে।
এই প্রকৃতিমাতার অভ্যন্তরে আমরা যারা আছি যেনো মাকে ভুলে না যাই। এই সবুজ-শ্যামল প্রান্তর, সুনীল আকাশের ছায়ায়,পৃথিবীর মায়ায় আপন-আলয় থেকে বিচ্ছিন্ন-বিচ্ছেদের আগ পর্যন্ত কখনো যেনো মাকে ভুলে না যাই।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দু’টি লাইন মনে পড়ছে; “আমারে ফিরায়ে লহ অয়ি বসুন্ধরে/কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে বিপুল অঞ্চল-তলে। ওগো মা মৃন্ময়ী/তোমার মৃত্তিকা মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই।”
চিরায়ত বাংলার আরেকটি গান- ‘সবাই বলো মা, মায়ের দাম কি হয় ? পৃথিবীতে মায়ের নেই তুলনা/ মাগো তোমার নেই তুলনা।’
অথবা ’মা জননী নাইরে যাহার ত্রিভূবনে তাহার কেহ নাইরে/মায়ের মতো আপন কেহ নাইরে। মায়ের মতো আপন কেহ নাই।’
অতএব আমরা কেউ যেনো অমূল্য রত্ন সেই মাকে ভুলে না যাই। মনের শিখায় আলোর দীপ্তিতে সদা-সর্বদা মা যেনো সমুজ্জ্বল থাকেন সর্বময়। বাংলাভাষার আরেকটি বিখ্যাত গানের কলি দিয়ে আজকের লেখার ইতি টানছিÑ
-“মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মতো ঝরে/ মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।”