সেজান মাহমুদ
লেখক পরিচিতি:সেজান মাহমুদ একজন স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক, গীতিকার, ছড়াকার। পেশাগতভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং শিক্ষক। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা কলেজ অব মেডিসিনের সহকারী ডিন এবং প্রফেসর হিসাবে কর্মরত।
গত কয়েকদিনে অন্ততপক্ষে সাতটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে মাদ্রাসা শিক্ষক ছোট ছোট বাচ্চাদের নির্মমভাবে পেটাচ্ছে; কোনটায় লাঠি দিয়ে, হাতপা বেঁধে ঝুলিয়ে, পিঠমোড়া ক’রে বেঁধে, লাথ্থি মেরে নানানভাবে, যা গ্রহণ করা যায় না। এ ছাড়াও শ’খানেক খবর মাদ্রাসার শিক্ষকদের শিশু বলাৎকার। কয়েকটা পয়েন্ট বিবেচনা করুন:
এক। যারা পরিসংখান বিদ্যা সামান্য হলেও জানেন তারা বুঝবেন যদি এইসব ঘটনাগুলো মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে, তাহলে না জানি কতো ঘটনা দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে! তারমানে শিশু অত্যাচার, ধর্ষণ মাদ্রাসাগুলোতে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এই এ ভিডিওগুলো টিপ অব দ্য আইসবার্গ!
দুই। বাইরে হুজুরগুলো হয়তো বলছে পড়ালেখার জন্যে বা ডিসিপ্লিনের জন্যে এটা করেছে। আসলে যে যৌন নির্যাতনে বাঁধা দেয়া বা চিৎকার করে বলে দেবে বলাতে এইসব শিশুদের প্রকাশ্য নির্যাতন করে অন্যদেরও বশে আনা হচ্ছে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
তিন। নব্বই দশক- দুই হাজার সালের দিকে পৃথিবীব্যাপী গীর্জাগুলোতে এরকম শিশুদের যৌন নির্য়াতনের ঘটনা ফাঁস হ’তে থাকে। বোস্টন গ্রোব পত্রিকা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গিয়ে দেখতে পায় হাজার হাজার যাজক বা প্রিস্ট জড়িত এবং গির্জার নেতা এমনকি পোপ পর্যন্ত জেনে গোপন রেখেছে। ২০১৫ সালে এ নিয়ে সিনেমা তৈরি করা হয়- নাম “স্পটলাইট “ এটা দেখলেই বোঝা যায় ধর্মের ক্ষমতা দিয়ে কীভাবে এই ঘৃণ্যতম অপরাধ করে যাচ্ছিলো ধর্মগুরুরা!
চার। এই কথাগুলো বললে একদল অতিবুদ্ধিমান নাদানের মতো ধেয়ে এসে বলবে- শিশু নির্যাতন তো অন্য মানুষও করে শুধু মাদ্রাসার শিক্ষক করলে দোষ হয়? এইসব লোকগুলো কিন্তু শিক্ষাবঞ্চিত না, রীতিমতো ডিগ্রীধারী। শিশু নির্যাতন যে কোন মানুষ করলেই তা অপরাধ। কিন্তু তা যদি ধর্মের শিক্ষা দেয়ার নামে হয় তাহলে আরো বেশি অপরাধ কারণ, মানুষ ধর্মগুরুদের কাছে বিশ্বাস নিয়ে যায়, নৈতিকতা আশা করে যায়, অসম- অলৌকিক পাওয়ার বা ক্ষমতার কাছে সমর্পনের জন্যে যায়। উপরন্তু শিশুরা তো জানেই না কী ভাল কী মন্দ। তাই এই ধর্মের শিক্ষা দেয়ার নামে অপরাধ আরো বড়।
পাঁচ। একটি দেশের ভালনারেবল বা দূর্বলেরা কতোটা নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পায় তা দিয়ে দেশটির নৈতিক অবস্থান নির্ধারিত হয়। সেদিকে না হয় বাদই দিলাম, যে দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ মুসলমান, তারা কী করে ধর্মের নামে এই ঘৃণ্যতম অপরাধ মেনে নিচ্ছে? মাদ্রাসা বা ইসলামিক শিক্ষার নামে, বা যে কোন নামে শিশু নির্যাতন, শিশু ধর্ষণ বন্ধ হোক। একবার ভাবুন আপনার নিজের শিশুটি এই কুৎসিত ট্রমার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। ঘুমাতে পারবেন তা জেনে এবং দেখে?