গত শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন সোলেমানি, যিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আলোচিত।
ওই হামলার পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপের মধ্যে রোববার ইরাকি পার্লামেন্টের অধিবেশনে দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রস্তাবটি পাস হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, এই প্রস্তাবে ইরাকের পার্লামেন্ট সদস্যরা দেশ থেকে সব বিদেশি সৈন্যকে ফেরত পাঠাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে বলেছে।
“যে কোনো বিদেশি সেনার ইরাকে অবস্থানের ইতি অবশ্যই টানতে হবে সরকারকে। বিদেশি সেনাদের কোনো কারণেই ইরাকের মাটি ব্যবহার, আকাশ ও নৌপথ ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।”
২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে বহুজাতিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ইরাকে ঘাঁটি গাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা। ২০০৭ সালে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়ে ধাপে ধাপে অধিকাংশকে ফিরিয়ে আনা হলেও এখনও ৫ হাজার সৈন্য রয়েছে।
আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সৈন্যরা ইরাকে থাকলেও তারা সরাসরি অভিযানে নেই।
পার্লামেন্টে পাস হওয়া প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, আইএসবিরোধী যুদ্ধে সহায়তার জন্য ইরাকি সরকার বহুজাতিক বাহিনীর প্রতি যে অনুরোধ জানিয়েছে, তা ফেরত নিতে হবে।
এছাড়া ইরাকের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ জানাতেও সরকারকে পার্লামেন্ট সদস্যরা বলেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
পার্লামেন্টে পাস হওয়া এই প্রস্তাব মানা ইরাকি সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে দেশটির শিয়াপ্রধান সরকারের প্রধানমন্ত্রী আদেল আল মাহদি দ্রুত বিদেশি সেনা উপস্থিতি কমানোর জন্য ইতোপূর্বে পার্লামেন্টকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, মূলত শিয়া পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটেই পাস হয়েছে প্রস্তাবটি, সুন্নি ও কুর্দি সদস্যদের বেশিরভাগই পার্লামেন্ট অধিবেশন বর্জন করেছিলেন।
সংখ্যালঘিষ্ঠ এজন সুন্নি এমপি রয়টার্সকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা এখন চলে গেলে ইরাকে অরাজক পরিস্থিতি দেখা দেবে, ইরানি মদদপুষ্ট শিয়াদের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা যাবে।
নিজেদের শত্রুতা ভুলে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র এক হয়েছিল আইএসের বিরুদ্ধে। ইরানের আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন সেনাদের সঙ্গে মিলেই এই যুদ্ধে অংশ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সোলেমানি হত্যাকাণ্ডের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। ওয়াশিংটন ও তেহরানের হুমকি ও পাল্টা হুমকিতে তটস্থ এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ও।