ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে অনেক আশার মেট্রোরেল। উত্তরা-দিয়াবাড়ির পর মিরপুর, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওয়ে দৃশ্যমান হলো ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা মেট্রোরেলের কাজ। পিলারের ওপর দেখা যাচ্ছে এ মেগা প্রকল্পের ভায়াডাক্ট। উত্তরা-দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁওয়ের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। এর মধ্যে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত শেষ হয়েছে ছয় কিলোমিটারের কাজ। এ অংশে পিলারের ওপরে ভায়াডাক্ট বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উত্তরা তৃতীয় ফেজ ডিপোর গেটের পাশে উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে মেট্রোরেল এক্সিবিশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার করা হবে। এতে মেট্রোরেলের নির্মাণশৈলীর ইতিহাস তুলে ধরা হবে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এটি পরিদর্শনে আসবে। এর পাশেই আরও একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানিদের স্মৃতি তুলে ধরা হবে। ২০১৬ সালের ওই ভয়াবহ হামলায় নিহত বিদেশিদের মধ্যে সাতজন জাপানি নাগরিক ছিলেন যারা মেট্রোরেল প্রকল্পে সমীক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। তারা হলেন- কোইও ওগাসাওয়ারা, হিরোশি তানাকা, নোবুহিরো কুরোসাকি, হিদেকি হাশিমতো, ওকামুরা মাকোতো, ইউকো সাকাই ও শিমোদায়রা রুই। প্রদর্শনী সেন্টারটি হবে মূলত তাদের স্মৃতি তুলে ধরার জন্যই। এর নকশা করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। নকশার কাজ শেষ হলেই তাদের কাছে জমি হস্তান্তর করা হবে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেলের কাজ। উত্তরা-দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁওয় পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের মধ্যে ছয় কিলোমিটারের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে, এ রুট চলতি বছরে খুলছে না, এখনই খুলে দিলে আগারগাঁও এলাকায় নতুন ভোগান্তি সৃষ্টি হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষ ২০২১ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের পুরো অংশটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উত্তরায় একটি মেট্রোরেল এক্সিবিশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার করা হবে। এর পাশেই আমরা নিহত জাপানিদের স্মৃতি তুলে ধরতে একটি কেন্দ্র স্থাপন করবো। আমাদের বিশ্বাস, সেখানে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসবে। মেট্রোরেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ইতিহাস এতে ঠাঁই পাবে।
রাজধানীর যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। এ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এ এলাকায় বসবাসকারী লাখো নগরবাসী মেট্রোরেল ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কোচ। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে যাত্রী নিয়ে ছুটবে মেট্রোরেল। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে এটি। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।