মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ায় বিরক্ত ছিলেন বাবা কামাল হোসেন। আশা ছিল ছেলে সন্তান হবে। নিঃসন্তান এক ধনী পরিবারে বিক্রির কথা চূড়ান্তও হয়ে ছিল। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। এতে অনেকগুলো টাকা হাতছাড়া হয়ে যায় তার।
এ নিয়ে স্ত্রী খাদিজাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন কামাল। মেয়েকে আদর-ভালোবাসা দূরে থাক, সহ্যই হতো না। তাই মেয়ের কান্নায় বিরক্ত হয়ে মাটিতে আছাড় দিয়ে বসলেন বাবা কামাল। চিরতরে কান্না বন্ধ হয়ে গেলো ফুটফুটে শিশুটির।
আর কোনোদিন কাঁদবে না মীম। মা অথবা বাবা বলেও ডাকবে না। মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ায় বাবার তাচ্ছিল্য সহ্য করে বেঁচেও থাকতে হবে না। জন্ম নেওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যেই মুক্তি মিলেছে তার। শিশুটির নিথর দেহ পড়ে আছে বারান্দায়। তাকে ঘিরে চলছে মায়ের আহাজারি। জন্মদাতার রোষাণলে পড়ে এভাবে জীবনটাই দিতে হবে কেউ ভাবেনি।
শনিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুরে পাড়াগাঁও বড় মসজিদ এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিচুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মাছিমপুরের বাবুল হোসেনের ছেলে কামাল হোসেন। সন্তানের কান্নায় বিরক্ত হয়ে তাকে আছাড় মেরে হত্যা করেছেন তিনি। এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুর লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মেয়ে সন্তান জন্ম হওয়ায় সন্তুষ্ট ছিলেন না বাবা কামাল। ছেলে সন্তান কেনো হলো না এ নিয়ে সবসময় স্ত্রী খাদিজার সঙ্গে ঝগড়া লেগে থাকতো। আজ শিশুটি কান্না করতে থাকলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আছাড় মারে কামাল। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশুটির। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে পুলিশ আরও জানায়, দুই বছর আগে পাড়াগাঁও গ্রামের হারুন অর রশিদের মেয়ে খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করেন কামাল হোসেন। তিনি আড়াইহাজার উপজেলার ছনপাড়া এলাকার একটি ভাতের হোটেলের কর্মচারী। ছেলে সন্তান হলে নিঃসন্তান এক ধনী পরিবারের কাছে বিক্রি করবে বলে চুক্তি করেন কামাল।
গত ২৭ অক্টোবর খাদিজা আক্তার একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেন। এরপর থেকে কামাল হোসেন তার স্ত্রীকে শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটলো। ঘটনার পর থেকে কামাল হোসেন পলাতক রয়েছেন। এ ব্যপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানায় পুলিশ।