রিভিউ লিখেছেন -হোসনে আরা জেমী
লুৎফুল হোসেনের সাথে প্রথম পরিচয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আমতলায়। ৯০ এর দশকে। শান্ত সৌম্য একটি ছেলে এসে বসে থাকে। আমরা কবিতা আবৃত্তি করার চেষ্টা করি। তারপর কত জল গড়িয়ে গেছে জীবনের। আবার যোগাযোগ সামাজিক মাধ্যমে। লেখালেখি দিয়ে। এবার ছুটে গেলাম বইমেলায়। অতঃপর লুৎফুলের সাথে বইমেলায় দেখা। এক বিকেলে আড্ডায় দুটি বই হাতে দিয়ে বলে কিছু লিখে দিয়েন আপা। সেই তাগিদ থেকেই লেখা।
সব মিলিয়ে লুৎফুলের লেখা ছয়টি বই।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বাঁধন ছিঁড়ে যাই’ (১৯৮৭)
দ্বীতিয় কাব্যগ্রন্থ ‘সাহস ফিরে পেলে এসো’ (১৯৮৮)
কবিতার বই ‘নাগর’, ‘প্রত্যূত্তরের পংক্তিমালা’ এবং ‘হলুই'(২০১৮)।
এখন আমি যে বইটির কথা বলছি তা হলো- ‘যদ্যপি প্রেম যদ্যপি প্রণয়’। বইটির প্রচ্ছদ আমাকে টেনেছে প্রবল ভাবে। প্রচ্ছদের শিল্পী লেখক নিজেই।প্রেম প্রণয় এ যেন এক অমোঘ টান। ভালোবাসার।
এ বইটির আঙ্গিক নিয়ে যদি বলা হয়, তবে একে প্রবন্ধ বলে ডাকব না। ছোট গল্প বা কবিতা তো অবশ্যই নয়। তাহলে একে বলা যেতে পারে গদ্য নির্ভর একান্ত অনুভবগাঁথা।
এর উপস্থাপনা কেউ যদি বলে জটিল, তবে তাকে ভুল বলব না।
কিন্তু যা মনে হলো এ বইটি আদ্যপ্রান্ত পড়ে, তা হলো, এই লেখাগুলোর আপাত জটিল আবরণ খসালে যে শাঁস পাওয়া যায়, তা সহজিয়া সুরের অনুভব।
প্রেম ও প্রণয় নিয়ে আমার দ্বিধা। আমার কাছে মনে হয়েছে দু’টো একই শব্দের এপিঠ ওপিঠ। পরিণত ভালোবাসাই প্রেম। প্রেম থেকে যায়, না পেলেও।
ইংরেজিতে Love এর সাথে মিলাতে পারি। প্রেম এক তরফা হতে পারে। না দেখে বা না মুখোমুখি হয়েও হয়। প্রেম মানে প্ল্যাটনিক নয় শুধু, এর সমান্তরালে বিদ্যমান থাকে দেহজ বিভাও। মন ও দেহের আকর্ষণ দুইই একে ধারণ করে।
প্রণয় সেতো আলো আঁধারিতে লুকোচুরি খেলা। একটু Romamce করে নেই এই জাতীয়। জীবনে প্রণয় আসবে চলে যাবে; কিন্তু, অনুভূতি গুলো মনের কোথাও না কোথায় দোলা দিয়ে যাবে। তাই প্রণয় দেহজ সম্পৃক্ততা ছাড়া পূর্ণতা পায় না। এতে যে প্রেম আছে তা ক্ষণিকের পূর্ণতা। তবুও তা প্রেম। এইসব প্রেমের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে না প্রণয়ের। দেখা হওয়াতো দূরের কথা।
লেখক এখানে বলেছেন- ‘এক টুকরো আকাশ পেতে, পাড়ি জমাতে পারি দূর থেকে বহুদূর।’
এই যুগে এসে লেখক, প্রেম খুঁজতে সাহিত্যকে আগলে ধরতে চেয়েছেন। সত্যিকারের প্রেম বলতে তিনি বলেছেন লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, ইউসুফ-জুলেখা, রাধা-কৃঞ্চ, রোমিও- জুলিয়েট। এখন এসবের বড়ই অভাব।
চিঠি লেখা আর হয় না আগের মত। অন্তরজালের দুনিয়ায় সবকিছু পেয়ে যাই, না চাওয়ার আগেই। আগে একটি চিঠির জন্য অপেক্ষা করতে হতো দিন, মাস কখনো বছর।
চেনা ছাদ, চেনা অলিগলি, রাজপথ সব কিছু ফেলে পালাই পালাই মন পাড়ি জমাতে চায় দূর দূরান্তে।
‘এখন যুগ হলো ডায়মন্ড কাট। যত কাট্, তত ছটা, তত বিচ্ছুরণ। যত প্রাণ, ততই জীবন। যত ক্ষরণ, ততই মরণ।’
কি অদ্ভুত কথা। যাহাই ভালোবাসা তাহাই যদি প্রেম হয় তবে প্রণয় কোথায় রাখি।
আবার প্রেমকে বলেছেন মনোজ আর দেহজ। কিভাবে
তিনি সত্যিটা তুলে আনলেন। দুটোই দহন, দুটোই মরণ।
যাহা ভালোবাসা তাহাই যদি প্রেম হয় তবে প্রণয়ে দোষ কি?
বাঙালি মানেই কবি। কেউ লিখছেন, কেউ বুনছেন।
প্রেমকে আবার ত্যাগের সাথে তুলনা করেছেন। যেমন : দেশপ্রেম। সীমাহীন ত্যাগেই পেয়েছি আমার সোনার দেশ।
কী অদ্ভুত করে কবি বললেন ‘প্রেমের ঘুড়িটাকে নাটাইয়ের সুতোয় বাঁধতে চাওয়াটাই বোকামি। ওকে কেবলি যেতে দাও….কেবিল যেতে দাও…. কেবলি যেতে দাও….।’
আসলে জীবনটা কেবলি শুভংকরের ফাঁকি। আর জীবন ভর মিথ্যে শুভংকর সাজার বৃথা চেষ্টা।
হা হা হা পুরুষ হলো ব্লু টুথ। থাকলে আছে নইলে হারিয়ে গেছে বহুদূর। থামাও নিজেকে আংশিক নয় পুরোটাই নইলে পুড়ে মরবে নিজেই। তাই কবি বলেছেন
‘কেউ ভালোবাসে পুড়ে যেতে
কেউবা পোড়ায়।’
‘যদ্যপি প্রেম যদ্যপি প্রণয়’ (২০১৮)
লুৎফুল হোসেন
প্রকাশক : রচয়িতা
পরিবেশক: জার্নিম্যান, ৩১০/৬ ইস্টার্ন প্লাজা,সোনারগাঁও রোড, ঢাকা- ১২০৫
পাঠক সমাবেশ, আজিজ সুপার মার্কেট(নীচতলা), শাহবাগ, ঢাকা ১০০০.