অখিল সাহা, টরন্টো: বন্ধঘোষিত পাটকলগুলো চালু রাখতে বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
রাষ্টায়ত্ব পাটকল বন্ধ করার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি যুক্তরাজ্য সংসদ আয়োজিত ভার্র্চুয়াল সভায় তিনি আরো বলেন, রাষ্টায়ত্ত্ব সম্পদ লুটপাট প্রতিহত করার আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। কোভিড মহামারিতে সাধারণ মানুষের গৃহবন্দী অবস্থার মধ্যে দেশে ২৫টি সরকারি মালিকানাধীন পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও রাষ্টায়ত্ত্ব সম্পদ লুটপাট প্রতিহত করার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত এই ভার্চুয়াল সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। গত ২ আগষ্ট রোববার যুক্তরাজ্য সময় বিকাল ৪.০০টা ও বাংলাদেশ সময় রাত ৯.০০টায়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকেন বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। প্রধান বক্তা হিসাবে ছিলেন প্রবীন শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী। এছাড়াও বিশেষ বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নেতা যুক্তরাজ্য কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা এলেক্স গর্ডন, খুলনা জেলা সিপিবি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিভাগীয় সমন্বয়ক এস এ রশীদ এবং যুক্তরাজ্য সিপিবি’র প্রবীণ সংগঠক ডাঃ রফিকুল হাসান জিন্নাহ। এছাড়াও পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক উদ্যোগের যুগ্ম আহŸায়ক বিদ্যুৎরঞ্জন দে, সিপিবি ফ্রান্সের সংগঠক কমরেড আলী আহমেদ দুলাল, যুক্তরাজ্য সংসদ বাংলাদেশ যুব ই্উনিয়নের সভাপতি সুশান্ত দাশ এবং চট্টগ্রাম ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মো: মসিউদ্দৌলাহ।
উক্ত সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য সিপিবির সংগঠক ডঃ মাহমুদা হোসেন, যুক্তরাজ্য সিপিবির কর্মী আইনজীবি মকবুল হোসেন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদের সভাপতি কমরেড হারুনুর রশীদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রোগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদুল ইসলাম এবং গ্রীসের বাংলাদেশ শ্রমিক সংগঠন একতা’র আহ্বায়ক কমরেড আকাশ রাজা।
সভায় বক্তারা উল্লেখ করেন, সরকারের জনস্বার্থবিরোধী ও আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের কারণে শুধুমাত্র পঁচিশ হাজার নিয়মিত শ্রমিক ও চব্বিশ হাজার অনিয়মিত শ্রমিকের জীবন অনিশ্চিত হচ্ছে, তাই নয়, এর ফলে দেশের তিন লক্ষাধিক পাট চাষীদের যে সমস্ত জলপ্লাবিত জমিতে অন্য কোন ফসল হয় না তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের সামগ্রিক জাতীয় ও দেশের রপ্তানীভিত্তিক অর্থনীতিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পাটশিল্প-সম্পৃক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকারত্ব ও আর্থিক অনিশ্চয়তায় পতিত হচ্ছেন। তাঁরা আরো উল্লেখ করেন, কোভিড অতিমারি যখন সমস্ত রপ্তানীমুখী শিল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে, তখন একমাত্র পাটশিল্পই কোনরকম ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। সারা বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব পাট তন্তু ও পাট পণ্যের ভবিষ্যত এখনো সুরক্ষিত এবং চাহিদা ক্রমবর্ধমান। কাজেই আন্দোলন জোরদারের মাধ্যমে সরকারকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করা হবে বলে মতপ্রকাশ করেন।
প্রবাসী বক্তারা পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন এবং আন্দোলনে সার্বিক সহযোগিতার অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন। সভায় বক্তারা সরকারের প্রতি পাটকলগুলি আধুনিকায়ন, বিজেএমসির মাথাভারী প্রশাসন সংস্কার ও পেশাদারী পরিচালন ব্যবস্থা চালু, শ্রমিকদেরকে কারখানা পরিচালনায় সংযুক্ত করা, দেশের অভ্যন্তরে পাট পণ্য বাধ্যতামুলক পণ্য মোড়ক আইনের আওতায় পাটের ব্যাগের বিপুল চাহিদার সুযোগ গ্রহন, আন্তর্জাতিক বাজারের বিপুল প্রাকৃতিক তন্তুজাত পণ্যের চাহিদার সুযোগ গ্রহন, পাটকলগুলি আধুনিকায়নে চায়নার সাথে স্বাক্ষরিত এমওইউ বাস্তবায়নসহ আরো কিছু বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেন এবং পাটকল বন্ধে সরকারের গৃহীত আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত রদ করার জোর দাবী করেন।
এছাড়াও তারা উল্লেখ করেন, উপকুলীয় অঞ্চলে ২৯টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সবচেয়ে নাজুক পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে থাকা দেশকে আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে।
সভার শুরুতে সিলেটের কমরেড তপন দত্ত আর্ন্তজাতিক গানটি পরিবেশন করেন। সমগ্র সভাটি পরিচালনায় ছিলেন যুক্তরাজ্য সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক আবেদ আলী আবিদ, সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য সিপিবি’র সভাপতি ডাঃ আহমেদ জামান এবং কম্পিউটার ব্যবস্থাপনায় ছিলেন যুক্তরাজ্য সিপিবি’র গোপাল দাস। সভার সভাপতি দেশে পাটকল বন্ধ ও রাষ্টায়ত্ব সম্পদ লুটপাট প্রতিহত করার আন্দোলনে প্রবাস থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন এবং সবাইকে এই প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।