মর্গে মৃত নারীদের ধর্ষণের অভিযোগে ডোমের সহকারি মুন্না ভগতকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মৃত্যু বা হত্যার পর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে আসা নারীর মরদেহে ধর্ষণের আলামত পায় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। পরীক্ষার জন্য কয়েকটি এইচভিএস (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে আলামতের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হয়। কয়েকটি নারীর মরদেহে পাওয়া আলামত একই ব্যক্তির বলে ডিএনএ পরীক্ষায় উঠে আসে। যা দেখে তদন্তে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম বিভাগ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সিআইডি কর্মকর্তারা পাওয়া আলামত ও প্রতিটি অপরাধ সংগঠনের প্রক্রিয়া যথাযথ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, কোনো না কোনোভাবে ভিকটিমদের মরদেহের ওপর কোনো ব্যক্তি বিকৃত লালসা চরিতার্থ করেছে।
পরে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মর্গে রাখা মৃত নারীদের ধর্ষণের অভিযোগে মুন্না ভগত (২০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার মুন্না রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ডোম জতন কুমার লালের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। ৪ বছর ধরে সে মর্গে ডোম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল।
ঘটনায় সিআইডি’র তদন্ত প্রক্রিয়ায় উঠে আসে, প্রত্যেকটি মরদেহেরই ময়নাতদন্ত একটি হাসপাতালের মর্গে করা হয়েছে। সিআইডি গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে নতুন ইঙ্গিত বা ক্লু পাওয়ায় প্রত্যেকটি মরদেহ মর্গে আনার পর তার কার্যধারা বিশ্লেষণ করা হয়।
এতে দেখা যায় সবগুলো ক্ষেত্রেই ময়নাতদন্তের জন্য আনা মরদেহ পরের দিনে লাশকাটার অপেক্ষায় মর্গে রেখে দেওয়া হতো। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি কর্মকর্তারা মর্গে কাজ করা ডোমদের ওই মামলার ময়না তদন্তের সময় গতিবিধি পর্যালোচনা করে দেখেন যে, হাসপাতালের ডোম আলোচ্য পাঁচটি ঘটনার সময় রাতে লাশ পাহারা দেওয়াসহ মর্গে অবস্থান করে।
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে তথ্য সংগ্রহ করলে সিআইডি’র অনুসন্ধানে ডোম আসামি মুন্না ভগত এই অপরাধে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিষয়টি টের পেয়ে তাৎক্ষণিক গা ঢাকা দিলে সিআইডি’র কাছে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করে সিআইডি, মামলা নং- ৪০।
পরে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিএনএ আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় আসামির ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে এইচভিএস-এ থাকা ডিএনএ প্রোফাইল মিলে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৫ মরদেহে একই ব্যক্তির আলামতের উপস্থিতি মিলে যাওয়ার পর ঘটনার তদন্তের শুরুতে আমরা সিরিয়াল কিলার কিংবা সিরিয়াল রেপিস্টদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে ধরে তদন্ত শুরু করি। তবে সুরতহাল কিংবা ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে মরদেহে আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় তদন্তে মোড় আসে। এরপরই মর্গে মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হতে পারে সন্দেহে তদন্ত শুরু করে সিআইডি’র তদন্ত টিম।
ডিএনএ ল্যাবে পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মরদেহে গ্রেপ্তার মুন্নার আলামত মিলেছে। আর প্রত্যেকটি মরদেহের বয়স ১২ থেকে ২০। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে মুন্না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।