দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগাড়ে দিশেহারা মানুষ। খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও জ্বালানির অভাব দেশজুড়ে। অর্থনৈতিক এই বিপর্যয়ের কারণে বিক্ষোভে ফুঁসছে জনগণ। বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তারপরও বিক্ষোভ-সহিংসতা থামেনি। কারফিউ দিয়ে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
শ্রীলঙ্কার এমন পরিস্থিতির জন্য জনগণ দায়ী করছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রীকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট। আর এসবের মাধ্যমে দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছেন গোটাবায়া।
দেশটিতে বৈদেশিক রিজার্ভ নেই, ডিজেল, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সরকারের কাছে অর্থ নেই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে জনগণকে দিনের অর্ধেকের বেশি সময় থাকতে হচ্ছে অন্ধকারে। রাস্তায় চলছে না বাস, গাড়ি।
মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশটির অর্থনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে এই সংকট এক দিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত।
উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি কাঁধে নিয়ে ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেন প্রেডিডেন্ট গোটাবায়া। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রুতই কাজে নেমে পড়েন তিনি। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলা ও রাজনৈতিক সংকট দেশটিকে মারাত্মক বির্পযয়ে ফেলে। রাজধানী কলম্বোতে গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় ২৯০ জন নিহত হন। পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার মূল উৎসে ভাটা পড়ায় গোটাবায়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে দেওয়া প্রতিশূতি রাখতে পারেননি। এছাড়া, করোনা মহামারির সময় তার সরকার বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি বাজারে নগদ অর্থ ছাড়তে শুরু করে। এতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। কমে যায় কর আদায়। বেড়ে যায় বাজেট ঘাটতি।
নজিরবিহীন এই আর্থিক সংকটের পেছনে বৈদেশিক ঋণ নেওয়াকেও দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে চীনের কাছ থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ঋণ নিয়ে অবকাঠামো খাতে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকে বিপর্যয়ের মুল কারণ বলা হচ্ছে। এই প্রকল্প থেকে আয় হয়েছে সামান্য। বিপরীতে এই ঋণ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কর কমানের সিদ্ধান্ত এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।