গভীর সমুদ্রে লুঙ্গি ফুলিয়ে ভাসতে ভাসতে ভারতে যাওয়া সেই ইমরান (১৪) ১৭২ দিন পরে দেশে ফিরলেন। দীর্ঘ আইনি জটিলতার বেড়াজাল ও কূটনৈতিক যোগাযোগের পর ফিরেছে ওই কিশোর।
শুক্রবার (১৪ ফেরুয়ারি) বিকেল ৪টা ২০মিনিটে তাকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বেনাপোল সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করে।
এসময় ইমরানের বাবা ও স্বজনরা সেখানে উপস্থিত ছিলো। পরে বেনাপোল থানার মাধ্যমে ইমরানকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট মাছ ধরার ট্রলার থেকে ছিটকে পড়া ইমরান ৬দিন লুঙ্গি ফুলিয়ে ভাসতে ভাসতে (৩১ আগস্ট) ভারতীয় জলসীমা অতিক্রম করে। পরে ওই দেশের মাছ ধরা ট্রলার এফবি বাবা পঞ্চানন ট্রলারের চালক মনোরনজন দাস তাকে উদ্ধার করে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার একটি থানায় পৌঁছে দেয়। সরকারি নিয়মে নুর আলী মেমোরিয়াল সোসাইটি নামে একটি শিশু যত্ন ও সুরখা কেন্দ্রে তাকে রাখা হয়।
ইমরান পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী ইমরান মো. এছাহাক খানের ছেলে। তার মায়ের নাম আসমা বেগম।
শিশু ইমরানের মামা বেনাপোল বিজিবির বরাত দিয়ে টেলিফোনে ইমরানকে হস্তান্তরের সত্যতা বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৬ আগস্ট একটি মাছ ধরার ট্রলারে চড়ে ইমরান সাগরে গেলে সামুদ্রিক ঝড়ে সে ছিটকে পড়ে যায়। ১০ ঘণ্টা উত্তাল সাগরে সে উঁচু ঢেউযের সঙ্গে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ করছিল। খাবি খেতে খেতে তার গায়ের গেঞ্জি দিয়ে ইশারা দিলে ভারতীয় এফবি পঞ্চানন নামে একটি ট্রলারের মাঝি তাকে উদ্ধার প্রথমে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার রায়দিঘী থানায় ও পরে ভোলাহাট থানার নূর আলী মেমোরিয়াল সোসাইটি নামে একটি শিশু যত্ন ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে রাখে। সেখানেই ইমরান দীর্ঘ ১৭২ দিন ছিল।
বরগুনার জেলা প্রশাসকসহ তার স্বজনরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করেছেন। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ইমরানের বেঁচে থাকাকে অলৌকিক এবং এই দিনে দেশে ফেরা দুই প্রতিবেশী দেশের জনগণের ভালোবাসা বলে অভিহিত করেন।
ইমরানের বাবা ইছাহাক ছেলেকে পেয়ের আবে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে পেয়ে খুশি। ওর খবর শুনে তো পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার ছেলেকে দেশে আনার জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, ইমরানকে দেশে আনার বিষয় আমরা ট্রলার মালিক সমিতির সহযোগিতার পাশাপাশি বরগুনা জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ অনেক চেষ্টার ফলে আনা সম্ভব হয়েছে।