ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা প্রত্যাহারে ১৬০ নোবেলজয়ীকে বিবৃতি না দিয়ে আইন বিষয়ে দক্ষ লোক পাঠিয়ে সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ইউনূসের বিচার স্থগিত চেয়ে বিবৃতির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার অবাক লাগছে ভদ্রলোকের যদি এতোই আত্মবিশ্বাস থাকতো যে তিনি কোনো কোনো অপরাধ করেননি তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর তাছাড়া সবকিছু একটা আইনমতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় এবং শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাৎ করে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয় তাহলে আমাদের কি হাত আছে মামলা বন্ধ করে দেবো। আপনারাই বিচার করেন।’
‘এটা একটা চলমান মামলা। আমাদের দেশে তো চলমান মামলা নিয়ে আলোচনা করি না। কারণ এটা সাবজুডিস। যেখানে এটা সাবজুডিস হিসেবে নিজের দেশেই গণ্য করা হয় সেখানে বাইরে থেকে বিবৃতি এনে মামলা প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়। আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার? এখানে আমার কোন অধিকার আছে সেই সেই পাওয়ারটা কি দিয়েছে আমাকে। তো আমি কি করবো।’
বিচার বিভাগ সস্পূর্ণ স্বাধীন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জুডিশিয়াল তো সম্পূর্ণ স্বাধীন। যারা বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা এক্সপার্ট পাঠাক। তাদের যদি এতোই দরদ থাকে, তারা আইনজীবী পাঠাক এবং যার বিরুদ্ধে মামলা তার দলিল দস্তাবেজ তারা খতিয়ে দেখুক। তারাই এসে দেখুক যে, সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি না। বিবৃতি দিয়ে কিভাবে মামলা তুলে আমি তো জানি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের এসে এখানে দেখা উচিত এখানে কি কি অসামঞ্জস্য আছে। লেবার ল’ নিয়ে অধিকার নিয়ে আমাদের অনেক কথা শুনতে হয়। আইএলওতে শুধু নালিশ আর নালিশ। এদেশের কোম্পানি আইন আছে প্রফিটের ৫ ভাগ লেবার ওয়েলফেয়ারে দিতে হবে। এখন যদি কেউ না দেয় এবং শ্রমিকরা যদি মামলা করে আর মামলার জন্য যদি তাদের বরখাস্ত করা হয়, এজন্য যদি আবার মামলা করে…সেই দায়িত্ব তো আমাদের না। আবার এই মামলা যাতে না হয় এজন্য ঘুষ দেওয়া, ঘুষের টাকা ধরা পরছে, সেই ঘুষের টাকা ফ্রিজ করা।’
‘এখন যারা বিবৃতি দিচ্ছে ওখানে বসে বিবৃতি না দিয়ে তাদের ক্লাইন্টের জন্য আইনজীবী পাঠাক এবং তারা এসে সবকিছু ঘেটে দেখুক অন্যায় আছে নাকি অন্যায়ভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা তো আমরা করিনি। মামলা করেছে ট্যাক্স ফাকিঁ। সেই ট্যাক্স ফাঁকিতে কেউ যদি ধরা পড়ে তাদের তো ট্যাক্স দিতে হবে। তিনি তো কিছু ফেরত দিচ্ছেনও। এনবিআর থেকে তো বলেছে, প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেগুলো স্থগিত হয়ে আছে। ট্যাক্স দেওয়া সকল নাগরিকদের দায়িত্ব। আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড তাদের দেশে ট্যাক্স ফাঁকি দিলে কোলে তুলে নাচে সরকার?’
তিনি বলেন, ‘বহু নোবেল বিজয়ী আছে পরবর্তী কাজের জন্য জেলে আছে। আমি মনে করি তারা যদি এক্সপার্ট পাঠায় তাহলে আরো অনেক কিছুই বের হবে। যেটা হয়তো আমরা হাতই দেইনি। বিবৃতি না দিয়ে আহ্বান জানাই, আপনার এক্সপার্ট পাঠিয়ে যাচাই করেন।’
‘একজন ব্যাংকের এমডি, ব্যাংকটি কিন্তু সরকারি….গ্রামীণ ব্যাংক। তার এমডি কিন্তু বেতন তুলতেন সরকারি। সরকারি বেতনভুক্ত একজন ব্যাংকের এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কিভাবে বিনিয়োগ করে? যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা কি একবারও সেটা জিজ্ঞেসা করেছে? যে ব্যাংকে চাকরি করার অবস্থায় কি করে আপনি বিদেশে এতো টাকা বিনিয়োগ করলেন, ব্যবসা করলেন। এই ব্যাপারে কি কেউ খোঁজ নিয়েছেন, এতো টাকা এলো কোথা থেকে? দুর্নীতিবাজ ধরা পরলে যদি পছন্দের হয় কোনো দোষ নাই, অপছন্দের হলে তাকে ভালো করে…এই তো অবস্থা আমাদের। তারা এক্সপার্ট পাঠাক, তা না হলে আমাদের দেশে আইন আছে আদালত আছে, লেবার ল’ আছে, ল’ কোর্ট আছে। ল’ উইল টেক ইটস ওন কোর্স।”
চিঠির খবরে শ্রমিকরা উদ্বিগ্ন। তাদের পাওনা অর্থ পাওয়ার বিষয়ে আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না-এমন এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কে বিবৃতি দিলো বা না দিলো সেটা আদালতের দেখার দরকারটা কি? আদালতের তা দেখার দরকার কি। আদালত ন্যায়বিচার করবে। আমাদের দল শ্রমিকদের জন্য কাজ করে। শ্রমিকদের যেটা পাওয়া তাদের কে সেটা দিতে হবে। অল্প কিছু দিয়ে বাকি ঘুষ দিয়ে বন্ধ করা এটা কি ন্যায়বিচার, সততা ন্যায়ের কাজ সেটাই আমার প্রশ্ন।’