-হোসনে আরা জেমি
প্রিয় শুভ্র
আজ এই ভরা গ্রীষ্মে তোমার লেখা কিছু একটা পাব আশা করছিলাম কিন্তু আমার পাওয়া হল না। এই গ্রীষ্মে কোন কোকিলের ডাক আমি শুনবো না জানি তবে নাম না জানা অনেক পাখি ডাকবে যখন আমি অবাক হয়ে তাদের মাঝে কোকিলের ডাক খুঁজে ফিরব।
বনফুলের বুনো গন্ধ যখন আমাদের নাকে লাগবে সেখানে খুঁজে ফিরব রজনীগন্ধা বেলি কিংবা বকুলের আনাগোনা আর নীল জলে বুনোহাঁসেরা খেলা করবে। আর আমি সেখানেই হারাবো দৃশ্যটা। বসন্ত দিনে লিখতে বসেছি তোমাকে আমার হৃদয়ের সব কিছু দিয়ে। এই সময়ে দিনগুলি বড় উজ্জ্বল আর চারদিকে চলে নানা রঙের বাহার। আমি মুগ্ধ চোখে খুঁজে ফিরি মুগ্ধতা। শরতের নীল আকাশের মত নীল শাড়িটা পরা বা বড় লাল টিপটা নাইবা পরলাম। না হয় রইলো কিছু বাকী, না হয় অপূর্ণই রয়ে গেল পূর্ণতা পাওয়ার আশায় কিছু আশা।
জানো তো তোমার নীল কিশোরী থেকে যৌবনে, যৌবন থেকে বার্ধক্যের দিকে যাচ্ছে। তাই কিছু না পাওয়ায় কষ্ট হয় না। শুধু অপেক্ষায় থাকে ছুঁয়ে দেবার। ভয় হয় জানোতো হারানোর ভয়, স্বপ্ন দেখার ভয়, হাতে হাত রেখে বহুদূর হেঁটে যাওয়ার ভয়, হেঁটে না যাওয়ার ভয় আর ভয় হয় অযুত-নিযুত অপেক্ষার।
আমার গ্রীষ্মের দাবদাহে চারিদিকে অসংখ্য ফুলের সমারোহ নানা রঙের বাহার যেমন সবুজ, হলুদ, লাল, বেগুনি, নীল। সব রঙগুলো কেমন যেন একটু বেশি রকম রঙিন।
গাঢ নীল একটু বেশি নীল, সবুজ একটু বেশি সবুজ। শুভ্র কত কিছু যে আমার তোমাকে লিখতে ইচ্ছে করে আর গাইতে ইচ্ছে করে।
‘মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলামÑ
আসলে কি আমরা তাই ছিলাম। কত দিন তোমার কথা ভেবে ভেবে কেঁদেছি নীরবে শব্দহীন তুমি জানতে পারোনি। আসলে আমি জানতে দিই নি নাকি তুমি অনুভব করোনি আমাকে।
আজ এই গোধ‚লি সন্ধ্যায় লেকের পারে বসে গাইতে মন চাইল নাকি শুনতে মন চাইলো জানিনা
‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায় যে জন দেয় না দেখা যায় যে লিখি ভালোবাসি আড়াল থেকে’
কি লিখবো বল রবিবাবু সেসব বলে গেছেন লিখে গেছেন। কবে কখন কিভাবে যে আমার মৃত্যু হয়েছিল ভালবাসায় আমি জানিনা। তুমি কি জানতে! আর আমি খুব যতœ করে আমার পরম ভালোবাসাকে রেখে দিয়েছি আমার শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে। আমি জানি তুমি রেখেছো মনের ভাঁজে ভাঁজে।
শুভ্র জানো তো এই সময়টার জন্য আমি আমরা অপেক্ষা করে থাকি নিরবে। তবে সেখানে যদি তোমার উপস্থিতি থাকতো সে রঙ আরও অপরূপ হতো। প্রকৃতির সাথে আমি আর তুমি একাকার হয়ে যেতাম। আমার খুব ইচ্ছা নীল আকাশ, সবুজ বনানী, সাগর, পাহাড় সব ছাড়িয়ে হারিয়ে যাব থাকবো নীরবে সেও কি কম প্রাপ্তি নয় বল।
শুভ্র তুমি কি জানো আমার কি ফুল পছন্দ! কৃষ্ণচ‚ড়া লাল-টা যেমন আমার পছন্দ তেমনি ভোরের শিউলি, কামিনী, সন্ধ্যার হাসনাহেনা আবার জেসমিন, বেলি, রজনীগন্ধা কত কত বলব। আসলে সব ফুলই আমার পছন্দ। তোমার কি ফুল পছন্দ আজও জানা হলো না। যদি বল কি চাই তোমার কাছে আমি বলব শরতের শিউলি মালা, বেলি ফুলের মালা দিয়ে মুড়ে দিও হাত কিংবা আমার খোঁপা। আমি চাই তোমার সাথে আমার দেখা হোক বৃষ্টি দিনে। আমি হয়তো মেঘ বালিকা নই। তবে তোমার নীল হয়ে বৃষ্টি হবো। আমরা কোনদিন ভালোবাসায় ঋণী হবো না। আমরা তার কথা বলব অলক্ষ্যে থেকে যিনি আমাদের মিলিয়ে দিয়ে খেলছেন আর ভাবছেন।
জানো তো এই যে এত কথা লিখছি খেই হারিয়ে যাচ্ছে আমার লিখতে পাচ্ছিনা সামার বা গ্রীষ্মের কথা সেখান থেকে কোথায় চলে এলাম বল।আমার সবুজ পাতারা আস্তে আস্তে রঙ বদলাবে সবুজ থেকে হলুদ, কমলা, লাল তারপর ঝরে পড়বে পাতাশূন্য হয়ে সব গাছ গুলো। মনেই হবে না যে এই গাছগুলোয় পাতা ছিল সেই সাথে আমি শূন্যতা অনুভব করতে থাকবো তোমার অপেক্ষার। ভালো থেকো।
ভালো থেকো আমার শুভ্র!!
তোমার নীল