শান দে
টরন্টোতে এই বছর শহীদদের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে চিরাচরিত প্রথাগত একুশে উদযাপন হতে পারে নি। কারনটা অবশ্যই বৈশ্বিক মহামারী। টরন্টোতে লক-ডাউন থাকায় mass গ্যাদারিং সম্ভব ছিল না। তবে ভার্চুয়াল একুশে উদযাপন হয়েছে। আলোচনা,কবিতা আবৃত্তি, নাচ, গান ছিল সেই সব ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। অন্যান্য বছরের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন আংগিকে এই অনুষ্ঠানগুলি পালন করা হয়েছে।
এর আগের বছরগুলিতে একুশে উপলক্ষে কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রিক দর্শক শ্রোতার উপস্থিতিতে যে সব অনুষ্ঠান হয়েছিল এবার তা হতে পারে নি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারী এবার অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছিল। বাংগালী কমিউনিটির বহুল প্রত্যাশিত প্রায় সমাপ্ত “টরন্টো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সৌধ” সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় নাই। এখনো এর আনুষাঙ্গিকতা বাকী রয়েছে। আমরা হয়ত আগামী বছর এর পূর্নাঙ্গ রূপ দেখতে পাবো। একটি বিষয় সাম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে যে, এই টরন্টো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সৌধকে অনেকে শহীদ মিনার বলে যাচ্ছেন। এই রকম বলাটা আদৌ ঠিক হচ্ছে কিনা তা বিবেনার দাবী রাখে। এর অফিসিয়াল যে নাম দেওয়া হয়েছে তা শহীদ মিনারের ধারনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এই ভাষা সৌধটির আন্তর্জাতিক রূপ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সৌধ বলতে বিশ্বের সব দেশের,সব জাতির মাতৃভাষাকে সম্মানার্থে নির্মিত সৌধ হিসাবে গন্য করা বাঞ্চনীয়। তাই এই মাতৃভাষা সৌধ সব মাতৃভাষার জনমানুষের সৌধ, এককভাবে শুধুমাত্র বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠির জন্য নির্মিত সৌধ নয়। তবে অবশ্যই এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সৌধ অর্জনের পেছনে কানাডিয়ান-বাংলাদেশীদের অবদান অনস্বীকার্য। এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সৌধ তাদেরই দাবী এবং আন্দোলনের ফসল। কিন্তু একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, কানাডা সরকার এই দাবী অনুমোদনের সময় একে একটি আন্তর্জাতিক রূপ দিয়ে গেছে আর যেহেতু বাংলাদেশে মাতৃভাষার জন্য সংগ্রামী এবং আত্নত্যাগের মহান ইতিহাস রয়েছে তাই কানাডা সরকার একুশে ফেব্রুয়ারীকেই এই দিবসটি উদযাপনের জন্য নির্ধারণ করেছে।উল্লেখ্য যে, ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারীকে যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে তার পেছনেও আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি উদযাপনের প্রেক্ষিত এবং আকাংখা রয়েছে। তাই এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সৌধ মোটেও শহীদ মিনার নয়।
শহীদ মিনার ধারনাটি সম্পূর্ণরূপেই বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়, এর মধ্যে কোন আন্তর্জাতিক রূপ নেই। প্রিয় কমিউনিটিবাসী, আমার লেখার উদ্দেশ্য কাউকে কটাক্ষ বা অবজ্ঞা করা নয়। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে টরন্টো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সৌধকে শহীদ মিনারের সাথে যাতে গুলিয়ে ফেলা নয় হয় সেই দিকটির প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষন করা। বিনীত অনুরোধ থাকলো, কানাডা সরকার অফিসিয়ালভাবে যে নামকরন করেছে এবং যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার থিমকে লক্ষ্য রেখে করেছে তাকে যেন আমরা সমুন্নত রাখি।