রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শিগগিরই করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা পাবে দেশের জনগণ।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সব ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন সাফল্যের সাথে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে ২ হাজার চিকিৎসক ও ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ বেড, ৬৬৬টি আইসিইউ এবং ৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর, ১৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬৭৮ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং ৬৩৯টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ব্যবস্থা রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি জানান, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব লাইফ সাইনসেস প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরাসরি কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে।এছাড়া CMSD এর মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে ভ্যাক্সিন কেনা বাবদ ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দেয়া হয়। আমি আশা করছি সরকার শিগগরিই দেশের জনগণকে কোভিড-১৯-এর টিকা দিতে পারবে।
এছাড়া চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণ ও গুণগত মানোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি চারটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম চলমান। চিকিৎসা শিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, ২০২০’ প্রণীত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ২৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ১৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ডিসেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬ জন ব্যক্তির কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত। মাঠপর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা সেবা কেন্দ্রসমূহে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চলমান।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় সরকার ছয়টি এমআরটি লাইন নির্মাণের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা-২০৩০ গ্রহণ করেছে। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৬ এর এ পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ। ইতোমধ্যে ডিপোর অভ্যন্তরে ও ভায়াডাক্টের ওপর প্রায় ১৪ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন করা হয়েছে। পাতাল ও উড়াল মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ৩১ দশমিক ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের লক্ষ্যে ডিটেইলড্ ডিজাইনের কাজ চলমান। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৫-এর নর্দান রুটের বেসিক ডিজাইন ও সার্ভে এবং ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাউদার্ন রুটের কাজ চলমান রয়েছে। গণপরিবহনে যাতায়াত সুবিধার জন্য ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম এবং র্যাপিড পাসের পরিধি বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দক্ষ, সেবামুখী, কল্যাণধর্মী ও দায়বদ্ধ জনপ্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য জরুরি প্রয়োজনে সহকারী সার্জনের স্থায়ী ক্যাডার পদে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৪২তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। সিনিয়র সচিব থেকে সহকারী সচিব এবং গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৪ পর্যন্ত সর্বমোট ১ হাজার ২৯ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩৫ হাজার ৪০১টি পদ সৃজন এবং ৪ হাজার ৯টি পদ স্থায়ীকরণে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিরত অবস্থায় সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুবরণ অথবা গুরুতর আহত হয়ে স্থায়ী অক্ষমতাজনিত মোট ১ হাজার ৪১১টি পরিবারের অনুকূলে ১০৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে।
তথ্য: বাসস