টাইপ-১ জুভেনাইল ডায়াবেটিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখান শিশুদের অগ্ন্যাশয়ের দ্বারা ইনসুলিন খুব কম উৎপন্ন হয় বা কোন ইনসুলিনই উৎপন্ন হয় না। ইনসুলিনের অভাবে, দেহ শর্করা ভাঙতে পারে না,তাই শর্করা রক্ত প্রবাহে থেকে যায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা সর্বোচ্চ স্তরে উঠে যায়, যা জীবনকে মৃত্যু ঝু্ঁকির দিকে ঠেলে দেয়।
এটি কখনও কখনও শিশু জন্মের পরেও দেখা দিতে পারে।সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসার অভাবে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলির ক্ষতিগ্রস্হ হয়ে থাকে। এই ধরণের ডায়াবেটিসকে “জুভেনাইল ডায়াবেটিস”, বা “ইনসুলিন-বেসড ডায়াবেটিস মেলিটাস অফ চিলড্রেন” বলা হয়।
লক্ষনসমূহ:
★ঘন ঘন মূত্রত্যাগ★খুব তৃষ্ণা লাগা★স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাওয়া ★লক্ষণীয় ওজন হ্রাস★অস্বাভাবিক ক্লান্ত লাগা★বমি বমি ভাব★বিরক্তি বোধ করা★দ্রুত শ্বাস ফেলা বা অজ্ঞান হয়ে পড়া।
এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। টাইপ ১ জুভেনাইল ডায়বেটিস হলে সারা জীবন চিকিৎসা নিতে হয়।নিয়মতান্ত্রিক জীবন ধারা,ফিজিক্যাল এক্টিভিটি,ডায়েট এবং ইনসুলিন নিয়ে চলতে হয়।
অতিরিক্ত ওজন,শারীরিক কসরতের অভাব,পড়াশোনার চাপ,মানসিক অস্হিরতা অনেক ক্ষেত্রে টাইপ ১ ডায়বেটিসে প্রভাবক(ফ্যাক্টর) হিসাবে কাজ করে।তাই এখন থেকে সচেতন হওয়া জরুরী। নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নাই।শিশুদের ব্যায়াম করানো কঠিন,তাই খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের শারিরীক কার্যকলাপে উৎসাহিত করতে হবে।
ইনডোর গেইম খেলা:
♦ টেবিল টেনিস: ঘরের বারান্দায় বা ডাইনিং টেবিলকে ব্যবহার করে সহজেই টেবিল টেনিসের কোট বানিয়ে খেলা যেতে পারে।এক ঘন্টা টেবিল টেনিস খেললে প্রায় ২০৪ ক্যালোরি ক্ষয় হয়।
♦দড়ির লাফ:এটি খুব সহজ একটি খেলা। বাড়িতে যে কোনো ঘরে খেলা যেতে পারে।খুব বেশি জায়গা দরকার হয় না।মাত্র পনের মিনিট দড়ির লাফে প্রায় ১১৯ ক্যালোরি ক্ষয় হয়।
♦হসপস বা কুতকুত জাতীয় খেলা: ছোট বেলায় আমরা অনেকেই মাটিতে দাগ কেটে কুতকুত খেলতাম।বাসায় মেঝেতে দাগ দিয়ে বাচ্চাদের এই ধরনের খেলায় উৎসাহিত করা যেতে পারে। মাত্র পনের মিনিট খেলায় প্রায় ৬৮ ক্যালোরি ক্ষয় হয়।
♦বোলিং বা bowling : বাড়িতে প্লাস্টিকের কাপ,বা ওয়ান টাইম কাগজের গ্লাস দিয়ে খেলা যেতে পারো। একটির উপর একটি কাপ সাজিয়ে দূর থেকে বল দিয়ে সাজানো কাপগুলো ফেলে দিতে হবে।ঘরের লম্বা করিডোরে বোলিং খেলা যেতে পারে। প্রায় ত্রিশ মিনিট বোলিং খেলায় ১০৫ ক্যালোরি ক্ষয় হয়।
♦ ট্যাব দি সেইপ /আকৃতি ধরা: ঘরের মেঝেতে টেপ দিয়ে বা চক দিয়ে নানা ধরনের ঘর করতে হবে,যেমন ত্রিকোনা,চক্রাকার,বৃত্তাকার ইত্যদি।এবার নির্দেশ অনুযায়ী দুই পায়ে লাফিয়ে,বা এক পায়ে লাফ দিয়ে,কখনো বসে লাফ দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঘরে যাবে।এই খেলায় বাচ্চারা নানা ধরনের আকৃতির নাম শিখবে এবং মজা পাবে।
♦ বেলুন ফুলানো: বাচ্চাদের যেহেতু ব্রিদিং এক্সারসাইজ করানো সহজ নয়,সেক্ষেত্রে ফেলুন ফুলানো একটি ভালো শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম। এছাড়া ফুলানো বেলুন হাতের উপরে রেখে ভারসাম্যের অনুশীলন করাও হতে পারে আনন্দের খেলা।
♦লুকোচুরি বা হাইড এন্ড সিক: ঘরে বাবা মায়ের সাথেই খেলতে পারে লুকোচুরি।শারিরীক পরিশ্রমের সাথে সাথে এটি মস্তিষ্ক বিকাশে সাহয্য করে।
♦ জাম্পিং বা লাফানো: ঘরের মধ্যে লম্বা দাগ কেটে শিশুদের জাম্পিং বা লাফানোতে উৎসাহিত করা যেতে পারে।যেমন প্রতিবার কতটুকু দূরত্বে যেতে পারছে সেভাবে মেপে নতুন লাইন টেনে শিশুকে অনুপ্রেরনা দিতে হবে।
আউটডোর গেইম:
প্রতিদিন নিয়ম করে ঘন্টাখানেক সাইকেল চালানো, হাঁটা,ফুটবল,ক্রিকেট,ব্যাটমিন্টন, ভলিবল,হ্যান্ডবল, সাঁতার কাটা এমন কি তাইকন্দ হতে পারে আনন্দদায়ক ব্যায়াম।
বাচ্চাদের নিয়মিত খেলাধুলার পাশাপাশি ব্যলেন্স ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।ফ্রোজেন ফুড বা জাংক খাবারের দিকে শিশুদের ঝোঁক থাকে,তাই বাবা মাকে বিশেষ নজরদারি করতে হবে।শর্করা বা চিনি জাতিয় খাবারের পরিমান কমিয়ে বেশি করে সব্জি,প্রোটিন,ফলমূলে আগ্রহী করতে হবে।
আমরা সচেতন হলে শিশুদের ডায়বেটিস ঝুঁকি কমাতে পারবো।
লেখক : উম্মে শায়লা রুমকী ,ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট পিটিআরসি,