হুমায়ূন কবীর ঢালী
আজকাল একটা বিষয় প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, জন্মের পরপরই অভিভাবকরা সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। আড়াই-তিন-সাড়ে তিন বছর হতে না হতেই স্কুলে ভর্তি করে দেন। অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়, কে কত কম বয়সে সন্তানকে ভর্তি করবেন। অভিভাবকরা পারেন তো শিশুকে এই বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন।
এর ফলে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া বাধাগ্রস্ত হয় । শিশুর মানসিক বিকাশের প্রথম ও উপযুক্ত সময় জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছর । এই সময়টা শিশুকে পারিবারিক আবহে আনন্দমুখর পরিবেশে সৃজনশীলভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এ সময় শিশু আপন মনে ছুটোছুটি, খেলাধুলা করবে। নানারকম প্রশ্ন করবে। শিশুর জীবনের সবচে প্রভাব সৃষ্টিকারী ক্ষেত্র হচ্ছে পরিবার, তথা-পিতামাতা।
শিশুর সৃজনশীলতা হচ্ছে এমন এক গুণ, যা পারিবারিক পরিবেশ থেকে উৎসাহিত ও উৎসারিত হয়ে থাকে। শিক্ষায় আনন্দ থাকতে হবে। আগ্রহ থাকতে হবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- ‘আনন্দহীন শিক্ষা, শিক্ষা নয়, যে শিক্ষায় আনন্দ নেই, সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না।’ তিনি আনন্দহীন শিক্ষা প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, ‘অন্যদেশের ছেলে যে বয়সে নবোদগত দন্তে আনন্দমনে ইক্ষু চর্চন করিতেছে, বাঙালির ছেলে তখন স্কুলের বেঞ্চির উপর কোঁচা সমেত দুইখানি শীর্ণ খর্ব চরণ দোদুল্যমান করিয়া শুদ্ধমাত্র বেত হজম করিতেছে, মাস্টারের কুট গালি ছাড়া তাহাতে তার কোনরূপ মশলা মিশানো নাই।” শিশু শিক্ষার আনন্দটাকে যাতে হজম করতে পারে, সে বয়সটাকে হিসাব করে শিশুকে স্কুলে পাঠাতে হবে। অর্থাৎ শিশুকে দ্রুত স্কুলে দেওয়ার আগে ভালো করে আরেকবার ভেবে নেওয়াই উত্তম।