তারেক রিপন, টরন্টো, কানাডা।
ইদ মানে আনন্দের সম্ভার। ইদ মানে একিবারে ভিন্ন কিছু। সব মানুষেরই ইদ নিয়ে পরিকল্পনার কোনো কমতি কখনো দেখা যায়নি। স্বক্ষমতার চেয়েও মানুষ তার পরিকল্পনাকে বেশি মূল্যায়ন করে থাকে ইদ প্রস্তুতি নিতে। সবারই লক্ষ একটা, আনন্দের ভাগাভাগি প্রিয় জনের সাথে, একটু ভিন্নভাবে। কতোটা ভিন্নভাবে? হা, এবারই পালিত হতে যাচ্ছে সে ভিন্ন রকমের ইদ।
এতোটাই ভিন্ন যা মানুষ কোনোদিন কল্পনাই করতে পারেনি। ভাবতেই পারেনি যে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর মানুষ ঈদগাহ গিয়ে নামজ আদায় করতে পারবে না, সামাজিক দুরত্ব নিয়ে হয়তো অনেকে ইদের জামাতে শরিক হবেন কিন্তু তাতে কতটা মানুষিক স্বস্তি থাকবে সেটা হয়তো সেখানে গেলেই বুঝা যাব। বলা হয় ইদে ধনী গরিব যখন এক কাতারে নামাজ আদায় করেন আর নামাজ শেষে মুসুল্লি গন যখন একে অন্যের সাথে বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করেন তাতেই সমাজের উঁচু নিচু ব্যবধান কমে আসে। হাজার বছরের মুসলিম ধর্মের ইতিহাস বা আমাদের বাস্তবতার নিরিখে তাই শিখেছি বা দেখেছি। ইদ আনন্দ মূলত ঈদগাঁ থেকেই শুরু হয়।
আর এবার কোথায় সে আনন্দ!! কোথায় নতুন জামা, কোথায় হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রিয় জনের বাড়ি ফেরা। প্রতিদিনই মনে হয় আমরা কতো বড় বড় ইতিহাসের স্বক্ষি হচ্ছি। এক একটি দিনই এক একটি নতুন ইতিহাসে জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। আমরা কি কখনো ভেবেছি, নিজ ঘরে একা একা ইদের নামাজ পড়বো!! ইদের খুদবা শুনবো না!! নামাজ শেষে কেউ কারো বাড়ি যাবো না!! ভেবে দেখুন কত ভিন্নতা নিয়ে এসেছে আমাদের এবারের ইদ। কল্পনা শক্তিকেও হার মানিয়েছে এবারের বাস্তবতা।
এবারের এ করোনা আমার কাছে অনেকটাই মনে হয় ছোটবেলার সে রাতভর কালবৈশাখী ঝড়ের মতো। সারা রাত ধরে প্রলয়ঙ্করী কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব কতটা ভয়ঙ্কর ছিলো তা টের পেতাম সকাল বেলা ঘরের দরজা খুলে। ঘর ভেঙে পড়ে আছে মাটিতে, তার উপর বড় বড় গাছ। ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে ফেলেছে পাশের ক্ষেতে। মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে দিগবিদিক হয়ে, খুঁজছে আপনজনকে। দূর থেকে ভেসে আসছে স্বজন হারানোর কান্না ……..এক রাতের ভয়ংকর সে তান্ডব, হয়তো এক যুগেও তার চিহ্ন মুছে নিতে পারেনি। এ করোনা মহামারিতে যারা আপনজন হারিয়েছেন তারাই একমাত্র বুঝতে পরাচ্ছেন এটি কতোটা প্রলয়ঙ্কারী ছিলো, কতোটা দুর্যোগ নিয়ে এসেছে তাদের জীবনে। আপন জনের শেষ বিদায়-এ পাশে থাকতে পারেনি তার সবচেয়ে আপনজনও। কতো নিষ্ঠুরতম ছিল সে বিদায়! মহামারী হয়তো চলে যাবে, মানুষও তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করবে, কিন্তু সত্যি কি স্বভাবিক হবেন স্বজন হারানো পরিবারটি?
স্বামী, বাবা, মা, ভাই, বোন বা বন্ধু হারানো মানুষটির মনের সে ক্ষত কি কোনো দিন শুকবে? পারবেকি প্রিয়জন হারানো সে পরিবারটি ইদ আনন্দে নিজেকে সামিল করতে!! সত্যি, “করোনা” পরিবর্তন করে দিয়েছে সারা পৃথিবীকে, পরিবর্তন করে দিয়েছে প্রতিটি মানুষকে!!
এতো সব ভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষ কি সত্যি পারবে, তার আনন্দের ভাগাভাগি করে নিতে। পারবে না, কেন জানেন? মানুষের সত্যিকারের, মনের আবেগ আর ভালোবাসা ফুটে উঠে পরস্পরের সংস্পর্শ আর ঘনিষ্ঠতায়। “সমাজিক দূরত্ব” যেখানে বর্তমান সংকট মুক্তির মাধ্যম সেখানে এবারের ইদে আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগটি আর কোথায়!!
সত্যি এ এক ভিন্ন রকমের ইদ। ভিন্ন পরিস্থিতিতে তবুও সবাইকে “ইদ মোবারক”