যে কোনো পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অগ্নিসংযোগের মতো সব বাধা মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে।
রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম ও বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধন করেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, কবে তাদের চেতনা ফিরবে, দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ আসবে?
তিনি বলেন, আমরা যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করি, তেমনি অগ্নিসন্ত্রাস বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ নিশ্চই অতিক্রম করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। দেশবাসীকে বলব সাহসের সঙ্গে যেকোনো অবস্থা মোকাবিলা করতে।
দেশি-বিদেশি চক্রান্তে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন খালেদা জিয়া (বিএনপি চেয়ারপারসন) গ্যাস বিক্রির (বিদেশিদের কাছে) মুচলেকা দিয়েছিল। আমি তা করিনি। সেই চক্রান্তে সায় দিলে এই সার কারখানা করতে পারতাম না।
তিনি বলেন, দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে হবে– বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই দৈন্যতায় ভোগে না। ক্ষমতা আমার জন্য বড় কিছু নয়, দেশের মানুষের কল্যাণই বড়। আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট; যা আর কখনও পিছিয়ে যাবে না।
সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে কৃষকরা সারের জন্য আন্দোলন করেছিল। সার চাওয়ার কারণে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয় গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ এবং টাঙ্গাইলের ঘাটাইলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। তখনই কথা দিয়েছিলাম কৃষকদের সারের জন্য ছুটতে হবে না। সার কৃষকের ঘরে পৌঁছে যাবে। এজন্য ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর যত কষ্টই হোক সারের কোনো ঘাটতি আমরা হতে দিইনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসার্টে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর গুলি চালিয়ে ২০ জনকে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখানে বেসরকারি খাতে একটি এবং সরকারিভাবে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ২০১৩ সালে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। সেখানে কর্মরত প্রকৌশলী সেই আগুনে পুড়ে মারা যায়। এভাবেই দেশের সম্পদ সে সময় একে একে তারা ধ্বংস করেছে। এখন আবারও তখনকার মতো অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে তারা।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।
জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার টন সার উৎপাদন হবে। যা দেশের মোট ইউরিয়া চাহিদার ৩৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানিতে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের। দেশে খাদ্য উৎপাদনে ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি থাকায় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে এ সার কারখানা। পলাশ ও ঘোড়াশালের পুরোনো দুটি কারখানায় যে পরিমাণ গ্যাস লাগত, একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে নতুন কারখানায় আগের দুটি কারখানার চেয়ে বেশি ইউরিয়া উৎপাদন করা যাবে।
এ সার কারখানা প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ, যা পরিশোধ করতে ১০ বছর সময় লাগবে। এতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন সার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।