“মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা”
বাংলা পৃথিবীর প্রাচীন সমৃদ্ধ একটি ভাষা। পারস্পরিক যোগাযোগ ও মনের ভাব প্রকাশের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা ভাষা। আবহমান কাল থেকে এই মাটির মানুষ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার।
দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান এর রাষ্ট্র ভাষার প্রশ্নে জন্ম নেয় ভাষা-বিরোধ। পশ্চিম পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানের মুখের ভাষা বাংলাকে চিরতরে বিলীন করে দিতে চায়। উর্দু কে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে বাংলা জুড়ে। ১৯৫২ সালে সেই আন্দোলন আরো তীব্রতর আকার ধারণ করলে, শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করে, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা ১৪৪ ধারা কে অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে পরে স্থাপন করে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম নজির। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলো সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকে। রক্তক্ষয়ী এই আন্দোলনের পর পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্টীয় ভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। চিরতরে শৃক্সখল মুক্ত হয় আমার মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা। সেই থেকে অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে শোকের দিন, গর্বের দিন, প্রেরণার দিন।
একুশ মানেই বাঙালির চেতনার প্রতীক। একুশের আন্দোলনেই ঘটে বাঙালির আত্মবিকাশ, শোষণ-বঞ্জনার বিরুদ্ধে বাঙালি প্রতিবাদী হয়ে উঠে।
স্বপ্ন দেখে একটি স্বাধীন ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেদিয়ে পরাধীনতার বেড়ি কেটে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ভাষাকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষে কানাডা প্রবাসী ভাষা সৈনিক রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম প্রাথমিকভাবে উদ্যোগ নেন। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করায় সফলতা পায়।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ভাষা আন্দোলনের প্রতি সন্মান জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তারপর থেকে সারা বিশ্বে গভীর শ্রদ্ধার সাথে এই দিনটাকে উদযাপন করা হয়। এতো ত্যাগ এতো বিসর্জনের বিনিময়ে অর্জিত যেই ভাষা আজকে সেই ভাষাকে কি সবচেয়ে বেশি অবজ্ঞাও করছি এই আমরাই? এখন বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকুরীর সাক্ষাৎকার দিতে গেলে বাংলার চাইতে ইংরেজিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এমনকি সর্বোচ্চ আদালতেও রায় ঘোষণা করা হয় ইংরেজিতে। নতুন প্রজন্ম ও ঝুকে পড়ছে ইংরেজি ভাষার প্রতি। ইংরেজি বলতে পারাকে আধুনিকতার পরিচয় বলে ও মনে করছেন তরুণ প্রজন্মের একটা বিরাট অংশ। ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। বহির্বিশ্বের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হলে ইংরেজির কোনো বিকল্প নেই কিন্তু বাংলা আর ইংরেজির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ফিউশন করা কিংবা বাংলার চেয়ে ইংরেজিকে বেশি প্রাধান্য দেয়াটা আমার কাছে মনে হয় বাংলা ভাষা কে অবমাননা করার শামিল। শুধু ইংরেজি ভাষাই নয় হিন্দি ভাষার হিংস্র থাবা থেকেও মুক্ত করতে হবে আমাদের সংস্কৃতিক অঙ্গন। ভাষা শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমাদেরকে গড়তে হবে বাংলা ভাষা সচেতন আগামী প্রজন্ম।
জয় বাংলা।
সোনিয়া হক
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.