বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাঙালির মন ও মননের সঙ্গী। এঁদের ছাড়া বাঙালির সাহিত্য ও সংগীত ভুবন এতটা সমৃদ্ধ ও উজ্জ্বল হতো না। বর্তমান সময়ে আমাদের জাতীয় জীবনে তাদের প্রভাব অপরিসীম হলেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁদেরকে নিয়ে কিছুটা উদাসীনতা লক্ষণীয়। যখন স্থির করলাম সম্পর্কের এই সংখ্যাটির বিষয়বস্তু হবে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল স্মৃতিচারণ, তখন তরুণ প্রজন্মের এক বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-এর বিষয়বস্তুকে প্রাচীন বলে আখ্যায়িত করলেন। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি এই বন্ধুর মন্তব্য আমাকে যেমনি ব্যথিত করেছে তেমনি চিন্তিতও করেছে।
সমাজ পরিবর্তনের এক রূপকার যিনি বাঙালির কাছে প্রতিবাদী কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহের ত‚র্যবাদক আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার, অবিচার, অবক্ষয় এবং শোষণের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাঁর কলম ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহী রূপ নিয়েছিল তা আজো কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে, বাঙালির হৃদয়ে আজো তা সকল অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুর তোলে।
অন্যদিকে, প্রথম বাঙালি নোবেল বিজয়ী বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির পরিচিতি এনে দিয়েছিলেন বিশ্ব দরবারে। যিনি বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংগীতকে নিয়ে গেছেন বৈশ্বিক উচ্চতায়। শিল্প-সাহিত্যের এমন কোনো অনুষঙ্গ নেই যা রবী ঠাকুর ছুঁয়ে যাননি, তাঁর সংগীত ও সাহিত্য বাঙালির জীবনের সমস্যা, সঙ্কট, আনন্দ-ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ প্রতিটি সন্ধিক্ষণে আজও বাঙালির চেতনাকে আন্দোলিত করে চলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের দৈনন্দিন
জীবনের এক অপরিহার্য অবলম্বন। দু’জনই মানবতাবাদী অসা¤প্রদায়িক চেতনার কবি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কতোটা আধুনিক ছিলেন যে ১৩০২ সালে লিখেগেছেনÑ ‘১৪০০ সাল কবিতাটি,
“আজি হতে শত বর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌত‚হল ভরে”
আর সেই কবিতাটি পড়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখলেনÑ ‘১৪০০ সাল (কবি সম্রাট রবীন্দ্রনাথের ‘আজি হতে শত বর্ষ পড়িয়া’)
আজি হতে শত বর্ষ আগে
কে কবি, স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদের শত অনুরাগে।
তাঁদের সাহিত্য কর্মের প্রতিটি শব্দে মেলে আধুনিকতার ছোঁয়া।
আগামী প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে তাঁদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির আলো, যা বিশ্ব তরুণ সমাজকে মুক্ত রাখবে সা¤প্রদায়িকতার কালো ছায়া থেকে, সমৃদ্ধ করবে সাহিত্য ভান্ডার আগামীর পথ ধরে।
আর মাত্র কয়েকদিন পরই আসছে ঈদুল ফিতর, যান্ত্রিক জীবনে ঈদ সবার জন্য বয়ে আনুক এক পশলা আনন্দ বৃষ্টি। আনন্দ আর ভালোবাসায় ভরপুর কাটুক দিনটি। ঈদ মুবারক।
সোনিয়া হক