সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ভারতের পশ্চিম উপকূলের জেলেদের জালে মাছ উঠছে না। বুধবার বিবিসি এক বিশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।
উপকূলীয় শহর মুম্বাইয়ের জেলে দর্শন কিনি বলেন, ‘আমরা সমুদ্রে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি, কিন্তু একটি মাছও ধরতে পারিনি। আমাদের পাঁচটি জালের মধ্যে কিছুই ওঠেনি।’
৩৬ বছর বয়সী দর্শন গত মাসের কোনো এক সকালে তার সহকর্মী জেলেকে নিয়ে শহরের মালাড শহরতলির মার্ভে সমুদ্র সৈকতে বন্দরে ফিরেছিলেন। তিন-চার বছর বয়স থেকেই তিনি পরিবারের বড়দের সঙ্গে ভারতের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে আরব সাগরের এই অংশে মাছ ধরতে বের হন। তার শৈশব থেকে সাগরে মাছ ধরার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
দর্শন বলেন, ‘আমার দাদা আমাকে বলতেন, হাঙর, স্টিং-রে এবং ডলফিনের মতো বড় মাছ এখানে ঘুরে বেড়াত। ছোটবেলায় আমরা জাল ফেলে এক বালতি মাছ পেতাম। কিন্তু আজ একটা মাছও পেলাম না।’
চলতি গ্রীষ্মে তাপের মাত্রা অনেক বেশি। এবার মাছ এই খাঁড়ি থেকে প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। মুম্বাইয়ের জেলেরা একসময় সমুদ্রের মাত্র দুই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে প্রচুর মাছ পেতেন। এখন তাদের মাছ পেতে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়।
কিন্তু জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে কিনির মতো ঐতিহ্যবাহী জেলেদের জন্য এতোটা দূরে যাওয়া অসাধ্য হয়ে পড়ছে। তাদেরকে আবার বড় ট্রলারের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়।
ভারতের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১ সেলসিয়াস বেড়েছে। এর ফলে পশ্চিম উপকূলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অঞ্চলে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহও বাড়ছে। তাই পানি গরম হওয়ার সাথে সাথে মাছ নতুন জায়গায় চলে যাচ্ছে।
সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী বর্ধন পাটঙ্কর বলেন, ‘আমরা যেমন ভবনগুলোতে বাস করি, মাছের বসবাসের জন্য বাসস্থানের প্রয়োজন এবং প্রবাল এর সংস্থান করে। কিন্তু তাপমাত্রার পরিবর্তন প্রবালগুলোকে ধ্বংস করছে।’