কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া বাজারে ফজলে রাব্বী নামের এক তরুণ চুল কাটতে এসে অপেক্ষায় থাকা মানুষের জন্য ‘সেলুন লাইব্রেরি’ শুরু করেছেন। এদিক-ওদিক ঘুরে না বেড়িয়ে যাতে অপেক্ষারত মানুষরা তাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে পারেন এমন ভাবনা থেকেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।
শনিবার (২২ জুলাই) বিকেল থেকে মসূয়া বাজারের ভাই ভাই হেয়ার কাটিং সেলুনে এ লাইব্রেরির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আমাদের এই গ্রামের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা। তার একটি কারণ বিখ্যাত লেখক সুকুমার রায়ের বাড়ি এই গ্রামে। সুতরাং আমি মনে করি এখানকার মানুষের মধ্যেও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর প্রয়োজন। তাই আমি এমন একটি ভাবনায় কাজ শুরু করি। আপাতত বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, সুকুমার রায়ের তিনটি বিখ্যাত বইসহ ১০টি বই দিয়ে এ লাইব্রেরির যাত্রা শুরু করেছে। আগামী দিনে বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন বড় বড় লেখকদের বইও সেলুন লাইব্রেরিতে স্থান পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বই জ্ঞান-মননের পরিধি বাড়ায়। তাই আমি সেলুনে চুল কাটতে আসা মানুষের অবসরের সময়টুকু কাজে লাগাতে ‘সেলুন লাইব্রেরি’ স্থাপন করেছি।’
ফজলে রাব্বী বর্তমানে অনার্সে পড়াশোনা করছেন। ইসলামিক ইউনিভার্সিটির অধীনে ঢাকার তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী তিনি। তার বাবা অধ্যাপক মাওলানা এখলাস উদ্দিন।
সেলুনের মালিক বিশাল রবিদাস জানান, রাব্বী ভাইয়ের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা বিভিন্ন সিনেমায় বড় বড় সেলুনে অপেক্ষারত লোকদের বই পড়তে দেখি। আজ সেটি আমার সেলুনেও বাস্তব হলো।
তিনি আরও বলেন, আমার এই সেলুনে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন মানুষ চুল-দাড়ি কাটাতে আসেন। একসঙ্গে বেশি মানুষ আসলে, তখন সিরিয়ালে বসে থাকতে হয়। রাব্বী ভাইয়ের এমন উদ্যোগে এখন থেকে অপেক্ষমান মানুষজন বই পড়ে সময় কাটাতে পারবেন।
সেলুনে চুল কাটতে আসা মো. সিদ্দিক হোসেন জানান, মানুষ এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। বই পড়া তো ভুলেই গেছে। অথচ আমাদের এই গ্রামে বিখ্যাত লেখক ও ছড়াকার সুকুমার রায়ের জন্ম। আমি রাব্বীর এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। তার চিন্তা ভাবনা অত্যন্ত চমৎকার। রাব্বীর মতো শিক্ষিত তরুণদের একটি শুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসা উচিত।
সেলুনে আসা সবারই একই মতামত। তারা মনে করেন, বই পড়লো আমাদের সময় অপচয় হবে না। চুল কাটতে এসে মানুষ অবসর সময়ে এ লাইব্রেরি থেকে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। সেলুনে চুল কাটতে আসা উঠতি বয়সী ছেলেরা বই পড়ার মাধ্যমে সমাজের অন্যায়-অনাচার, মাদক ও জুয়ার মতো রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
জেলা গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান আজিজুল হক সুনম জানান, বিষয়টি জানতে পেরে আমি খুবই আবেগাপ্লুত। এখন অপেক্ষায় আছি সেলুনটি এক নজর দেখার জন্য। আজকাল তো মানুষ লাইব্রেরিতে বসে বই পড়া প্রায় ভুলেই গেছে। ফজলে রাব্বীর এমন উদ্যোগে জেলার কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহাসিক মসূয়া বাজারে প্রথম কোনো ‘সেলুন লাইব্রেরি’ স্থাপন হয়েছে। আমরা জেলা গ্রন্থাগার থেকে বই সংক্রান্ত যেকোন প্রয়োজনে ফজলে রাব্বীর পাশে আছি।