সাবরিনা নিপুঃ রাশেদ বাড়িতে থাকলেও অসহ্য লাগে আজকাল। বিয়ের পর একবছর মোটামুটি সহজ ভাবে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো নন্দিনী। আর রাশেদ এর মতোন বেকার, নেশাখোর আর বাউন্ডুলে ছেলেকে বিয়ে করার হ্যাপাটা যে কতোখানি ততোদিনে নন্দিনীও হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করেছে। যতো দিন যাচ্ছে রাশেদ যেন আরো দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। প্যান্ডামিকে সারা সারাদিন পার্টির ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছে রাশেদ সেটা যতোটা না মানুষকে সাহায্য করার জন্য তারচেয়েও বেশী তার নেশার টাকা সংগ্রহ করার জন্য। প্রতিদিন বাইরের বারান্দায় বসে রাতভোর মদ গিলতো তার দুই লেজুড় সহ। কোনো রকমের সোশ্যাল ডিষ্ট্যানসিং তো দূরের কথা পারলে এদের নিয়ে ঘরে ঢুকে যায়। ওরা আসলে নন্দিনী কখনও দরজা খুলতো না। নিজেকে আড়াল করে রাখতো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো কই? কোভিড আক্রান্ত হলো রাশেদ।
এরপরতো স্বাভাবিক নিয়মেই সে নিজেও আক্রান্ত হলো। ঘরে একটা টাকা নেই, খাবার নেই। মাঝে মাঝে ড্রাইভারকে দিয়ে টুকটাক খাবার আর মাসের বাজার পাঠিয়ে দিতো মা। মায়ের মনতো , সন্তানের দুঃসময় ঠিকই টের পেয়ে যায়। আর এই পৃথিবী জুড়ে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে কে ভেবেছিলো কবে? তবে নন্দিনীর বাবা জানার পর সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। তবুও অল্পের ওপর দিয়ে সেরে উঠেছিলো ওরা দুজনেই।
রাশেদের উচ্চাভিলাষী মন কিছুতেই ওদের ভেতরকার স্বস্তির সম্পর্কটা ফিরিয়ে আনতে পারছিলো না। নন্দিনী তবু চেষ্টা অব্যাহত রাখে ওর সাথে মানিয়ে চলার। নন্দিনীর এই মুহূর্তে একটা চাকরীর খুব প্রয়োজন। একাকী সময় কাটাতে অসহ্য হয়ে রোজ চাকরীর জন্য আবেদন করে নন্দিনী।এই একটা স্মার্ট ফোন শুধু ওর সম্বল । আর ওই ফোন দিয়েই শুধু মায়ের সাথে কথা হয় টুক টাক। আর বিভিন্ন জায়গায় কাজের ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারে। কতো ভুরি ভুরি কোয়ালিফায়েড ছেলে মেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে একটা চাকরীর আশায়। আর ওর মতো এইচ এস সি পাশ করা মেয়েকে কে চাকরী দেবে ?
সেদিন মুদি দোকান থেকে টুক টাক সদাই কিনে ফেরার পথে একটা দোকানের স্লাইডিং ডোরে স্কচটেপ দিয়ে লাগিয়ে রাখা একটা কাগজে চোখ পড়তেই মনে হলো এ চাকরীটা ওর হলেও হতে পারে। একজন এইচএসসি পাশ নারী প্রয়োজন ওদের। ও একবার উঁকি দিল বাইরে থেকে । দেখলো ভেতরে ওর বয়সী আরো দুজন মেয়ে বসে কাপড় ভাঁজ করছে। আর একটা বড় রিভোলভিং চেয়ারে একজন ভদ্র মহিলা বসে কিছু লিখছেন। উনিই হয়তো মালিক। মনে মনে ভাবলো আজই যদি একবার সরাসরি কথা বলে যেতে পারে তাহলে ভালো হতো। রাশেদ বাড়ি নেই। ও চলে আসলে বের হওয়াই মুশকিল । চাকরীটা হওয়ার আগে ওকে কিছুতেই জানাতে চায়না নন্দিনী।
ওখানেই ওর কাপড়গুলোর হিসেব রাখাই ওর কাজ। তবুও যতোক্ষণ ও এখানে থাকে মনটা খুব ভালো থাকে ওর । খুব অল্প বেতনের চাকরী, তবুতো নিজের উপার্জন করা টাকা। অন্তত বাজার খরচটা চলে। একটা ছুটা কাজের বুয়া রাখতে পারছে আজকাল । এটাই ওর জন্য বিরাট স্বতির ব্যাপার। প্রথম প্রথম চাকরীর কথা শুনে প্রচণ্ড ক্ষেপেছিলো রাশেদ। ইদানিং আর ওকে বাজার খরচাটাও দিতে হয়না তাতেই হয়তো বেশ আরাম পেয়ে গেছে । মাঝের মাঝে সিগারেট আর দেশী মদ এর আসর বসায় বারান্দায়। ইদানিং সে টাকার যোগান দিতে হয় নন্দিনীকে। না দিলেই অশ্লীল গালি গালাজ শুরু হয়। এভাবেই চলছিলো ওদের দাম্পত্য জীবনের অসহ্য দিনগুলো।
আজ বুটিকের ম্যাডাম বললেন , সামনের মাসে একটা মেলায় স্টল নেয়া হচ্ছে। সেখানে সারাদিনের জন্য সময় দিতে হবে নন্দিনীকে। ও মনে মনে একটু চিন্তায় পড়ে গেল, রাশেদ কি রাজী হবে ? এমনিতেই খুব একটা কথা বার্তা হয়না আজকাল ওর সাথে । টেবিলে মুখ বুজে খেয়ে উঠে যায়। কখনো কোনো রাতে অভ্যাসবশত: রমণ ,এভাবেই চলছে ওদের মাত্র দু বছরের দাম্পত্য জীবন। রাশেদের মনোভাব খুব বুঝতে পারে নন্দিনী কিন্তু ওর বাবা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে প্রথমে খুব কষ্ট পেলেও এখন মনে হয় খুব সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাবা। ইদানিং বুটিকে কাজ করার পর থেকেযে যে টকটাইম পায় তা ইউজ করে যখনই সুযোগ পায় মায়ের সঙ্গে অন্তত কথা বলতে পারে।
চলবে……