সংঘাতকবলিত সুদান থেকে আলাদা আলাদা ফ্লাইটে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৭০ জন বাংলাদেশি। পরে তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হবে।
সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দূতাবাস জানায়, যুদ্ধকবলিত সুদান থেকে ৭০ বাংলাদেশি নাগরিক সৌদি এয়ারফোর্সের বিশেষ ফ্লাইটে আজ দুপুরে জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। তাদের স্বাগত জানান সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এ সময় জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।
সুদান থেকে সৌদি এয়ারফোর্সের দুটি ফ্লাইটে মোট ৭০ জন বাংলাদেশি জেদ্দায় পৌঁছান। আরও প্রায় ৬৫ জন বাংলাদেশি যাত্রী নিয়ে সুদান থেকে আরেকটি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে রওনা দেবে বলে জানা গেছে।
দূতাবাস আরও জানায়, সুদান থেকে প্রত্যাগত বাংলাদেশি নাগরিকরা আজ রাত ১টার ফ্লাইটে জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সুদান থেকে প্রথম দফায় নারী, শিশু ও অসুস্থ যাত্রীদের অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বিশ্রামের জন্য জেদ্দা বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ইংরেজি সেকশনে বিশ্রাম, খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুদানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি ছিলেন। তাদের মধ্যে যারা দেশে আসার জন্য নিবন্ধন করেছেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
এর আগে সুদানে আটকে পড়া ৬৭৫ বাংলাদেশির মধ্যে ১৩৫ জন জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হন। বাকিরা এখনো সৌদি আরবে পৌঁছাননি।
পোর্ট সুদান থেকে লোহিত সাগর অতিক্রম করে জেদ্দা বন্দরে পৌঁছাতে জাহাজ না পাওয়ায় তাদের ফ্লাইটে করে জেদ্দায় নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
গত বুধবার সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে ১৩টি বাসে আটকে পড়া ৬৭৫ জন বাংলাদেশি পোর্ট সুদানে পৌঁছান। ট্রাভেল পারমিট ইস্যু ও জাহাজের শিডিউল পেতে দেরি হওয়ায় তারা জেদ্দায় পৌঁছাতে পারছিলেন না। পরে জাহাজ না পাওয়ায় ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়।
সংঘাতকবলিত সুদান থেকে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিককে উদ্ধার করছে সৌদি আরব। তবে ওই কার্যক্রমে কতজন বাংলাদেশি উদ্ধার হয়েছেন, তা জানা যায়নি।
সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলমান উদ্ধার তৎপরতার অংশ হিসেবে শুক্রবার সুদান থেকে উদ্ধার ৫২ জন জেদ্দায় পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ঘানা, লেবানন, নাইজার, লিবিয়া ও গিনির নাগরিক আছেন। তাদের সৌদির রাজকীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আল জুবাইলে করে নিয়ে আসা হয়েছে।
এখন উদ্ধারকৃতদের স্বদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল সুদান থেকে বাংলাদেশিসহ ৯১ জনকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল সৌদি আরব।
সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সুদানে সংঘাত শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দেশটি থেকে সৌদি আরব ২ হাজার ৮৭২ জনকে উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে সৌদির নাগরিক ১১৯ জন। বাকি ২ হাজার ৭৫৩ জন ৮০টি দেশের নাগরিক।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে গত ১৫ এপ্রিল লড়াই শুরু হয়। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আরএসএফ প্রধান জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো দুই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, লড়াইয়ে কমপক্ষে ৫১২ জন নিহত ও ৪ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছেন। তবে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংঘাত পরিস্থিতিতে রাজধানী খার্তুম, দারফুর অঞ্চলের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয় হয়ে পড়েছে। সহিংস পরিস্থিতির মুখে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সুদান থেকে নিজ নিজ দেশের কূটনীতিক ও নাগরিকদের উদ্ধার করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও সেখান থেকে নাগরিকদের ফেরত আনতে তৎপরতা শুরুর কথা জানিয়েছে।