বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় তুরস্ক। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা শুধু বাংলাদেশেরই সিদ্ধান্ত, বিদেশিদের নয়।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান।
তুর্কি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা বিদেশিদের কোনো বিষয় নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে। এটা শুধু বাংলাদেশেরই সিদ্ধান্ত, বিদেশিদের নয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের সমাধান করতে হলে আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। সরকার একা সব কিছু করতে পারে না।
রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করছে যাতে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বিরোধী দল অংশ না নিলে বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সুযোগ হারাবে। নির্বাচন সব পক্ষের অংশগ্রহণমূলক হওয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করি, সরকার এ দেশে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।
মোস্তাফা তুরান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। আর আগামী নির্বাচনে যে দলই জয়লাভ করুক, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতন্ত্রের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। একইসঙ্গে বিরোধী দলেরও দায়িত্ব আছে। গণতন্ত্রে দুটি পক্ষ থাকে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সমস্যা আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা তুরান বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই যে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে কমিয়ে দেবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক দেশেই এ সমস্যা আছে। আমাদের দেশেও আছে। তবে যারা সরকার ব্যবস্থায় থাকে, তারা যদি মত প্রকাশের সুযোগ দেয় টেনশন অনেকটাই প্রশমিত হয়।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, সহযোগিতা শুধু সামরিক সরঞ্জাম কেনা-বেচার বিষয় নয়, এটা কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়ও। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চাই। বাংলাদেশ তুরস্ক থেকে ড্রোন, পেট্রোল ভেসেল কিনেছে। আমি মনে করি, সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তুরস্ক বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সমর্থন করছে। তুরস্ক ওআইসি, আইসিজেতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে আঙ্কারার অবস্থান নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয় বলে জানান মোস্তাফা তুরান। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা-আঙ্কারা সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। তবে সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসানও হয়েছে। আমরা সে সময় বন্ধু দেশ হিসেবে শুধুমাত্র আমাদের মতামত দিয়েছিলাম।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
গেল সোমবার সিজিএস আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছিলেন, নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক মতামতের একটা গুরুত্ব আছে। জাপান ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরপর উদ্বেগ জানিয়েছিল। আমরা নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা শুনেছি, যা পৃথিবীর আর কোথাও শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না।
ইতো নাওকির ওই বক্তব্যের জন্য তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত। ওই বক্তব্যের জন্য জাপানের রাষ্ট্রদূতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশি বন্ধুদের পরামর্শের প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করেন শাহরিয়ার আলম।