এক স্বর্ণ চোরাকারবারী জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গগাওয়াকে তার ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আরেক জন চোরাকারবারী প্রাক্তন অংশীদার হিসাবে মানাঙ্গাগওয়ার কথা বলেছেন এবং তার সাথে তিনি এখনও দেখা করেন। তৃতীয় একজন বলেছেন, তাকে সোনা চোরাচালান চক্রের মধ্যে প্রেসিডেন্টকে রাখতে হবে।
প্রেসিডেন্টের ভাইঝি একটি বিস্তৃত অর্থ পাচার এবং স্বর্ণ চোরাচালানের রূপরেখা দিয়েছেন এবং এটি তিনি কার্যকরে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জিম্বাবুয়ের আরেক শীর্ষ কূটনীতিক অর্থপাচারের একটি চুক্তির অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে ফোন দিয়েছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘গোল্ড মাফিয়া’ নামে চার পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, কীভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় সোনা চোরাচালানকারী চক্র তাদের দেশকে লুণ্ঠন করে অপরাধীদের কোটি কোটি ডলার পাচারে সহায়তা করছে। আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) এর আন্ডারকভার সাংবাদিকরা এই চক্রে অনুপ্রবেশ করার জন্য চীনা অপরাধী হিসাবে নিজেদের জাহির করেছিলেন। অপরাধী চক্রের সঙ্গে মিশে অনুসন্ধানের পর অনুসন্ধান চালিয়ে চোরাকারবারীদের রক্ষক হিসেবে যার নাম উঠে আসে, তিনি হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গগাওয়া
দীর্ঘদিনের নেতা রবার্ট মুগাবেকে সরিয়ে ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট হন মানাঙ্গগাওয়া। ৮০ বছর বয়সী মানাঙ্গগাওয়া দুর্নীতি দূরসহ দেশের অগণিত আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে আল জাজিরার তদন্তে মানাঙ্গগাওয়া এবং স্বর্ণ চোরাচালান ও অর্থপাচারের ঘটনাগুলোর মধ্যে একাধিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ঘটনাগুলো দেশটিতে রক্তপাত ঘটিয়ে যাচ্ছে।
আল-জাজিরা আই-ইউনিটের কাছে জিম্বাবুয়ের সোনার বিনিময়ে অর্থ পাচারের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ উপায়গুলির মধ্যে একটির প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইউরোপ ও আমেরিকায় জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রদূত উয়েবার্ট অ্যাঞ্জেল এবং তার সহকারী রিকি ডুলান।
তারা তাদের চক্রে মানাঙ্গগাওয়াকে ‘এক নম্বর’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বারবার জোর দিয়েছিলেন যে, তার কী করছেন সে সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সচেতন। এই চক্রের প্রস্তাবটি একেবারেই সহজ: অর্থপাচারকারীরা অ্যাঞ্জেলের মাধ্যমে জিম্বাবুয়েতে তাদের হিসাববিহীন নগদ অর্থ পাঠাতে পারে। কারণ সে কূটনৈতিক মর্যাদা পাওয়ায় বিমানবন্দরে তাকে তল্লাশি করা হয় না। বিনিময়ে পাচারকারীরা জিম্বাবুয়েতে সমপরিমাণ সোনা পাবে যা তারা তখন আপাতদৃষ্টিতে বৈধ অর্থে বিক্রি করতে পারত।
অ্যাঞ্জেল ও ডুলান আল জাজিরার আন্ডারকভার রিপোর্টার এবং মানাঙ্গগাওয়ার মধ্যে একটি বৈঠক আয়োজনেরও প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। এর জন্য দুই লাখ মার্কিন ডলার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু অ্যাঞ্জেল স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, বিষয়টি মানাঙ্গগাওয়াকে দেওয়া ঘুষ হিসাবে দেখা উচিত নয়। বরং এটি জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টকে ‘ধন্যবাদ’ জানানোর একটি উপায় হতে পারে।