ডাঃতাবাস্সুম উর্মি রোজা
আপনি কিংবা আপনার সন্তান অথবা পরিবারের অন্য কোন সদস্যরা কি বাথরুমেও মোবাইল নিয়ে যান? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে আজ থেকে আপনাদের এ অভ্যাসটি পরিবর্তন করুন। কারণ আপনাদের এই বদ অভ্যাস অনেক সংক্রামক রোগের শিকার করতে পারে। শুধু এটিই নয়, আপনাদের শরীরে গুরুতর রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
কয়েক বছর আগে মানুষ তাঁদের সময় বাঁচানোর জন্য বাথরুমে সংবাদপত্র বা ম্যাগাজিন পড়ত। তবে আজকাল স্মার্টফোন দু’জনের জায়গা করে নিয়েছে। এখন সবাই মোবাইল ফোন নিয়ে বাথরুমে ঘন্টা খানেক সময় কাটায়। ফেসবুক চেক করা, ইনস্টাগ্রামের ফিডগুলি দেখা, হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করা, এমনকি সারা পৃথিবীর সংবাদ পড়ে ফেলেন এই সময়ে। সত্যিই এই জিনিসটির প্রতি আসক্ত ব্যক্তিরা জানেন না যে, তাঁরা এটি করে নিজেরাই অসুখ-বিসুখকে আহ্বান করছেন।
স্মার্টফোন কীভাবে টয়লেট থেকে রোগ বহন করে সে সম্পর্কে জেনে নিন…
বাড়ির সমস্ত জায়গার মধ্যে সর্বাধিক জীবাণু বাথরুমে পাওয়া যায়। এখানে ট্যাপ, হ্যান্ড ড্রায়ার, ডোর ল্যাচ হ’ল সর্বাধিক জীবাণু, যা আপনি কখনও দেখেননি। আপনি যখন আপনার সঙ্গে ফোন রাখেন, তখন আপনার ফোনটিতে ব্যাকটিরিয়ার সংস্পর্শে আসে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, টয়লেটের ভিজে পরিবেশে ব্যাকটিরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। ঠিক ভাবে হাত না ধোওয়া বা টয়লেট ব্যবহারের সময় সেই জায়গায় মোবাইল রাখার ফলে তাতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সালমোনেল্লা, ই.কোলাই, সিগেল্লা এবং ক্যামফাইলোব্যাকটরের মতো ব্যাকটিরিয়া। ফোনের টাচস্ক্রিনে গ্যাসট্রো এবং স্ট্যাপের মত ক্ষতিকর ভাইরাস জন্মাতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। টয়লেটে ব্যবহারের পর সেই ফোন আমরা বিছানায় বা খাবার জায়গায় রাখি এবং সেখানেও ব্যবহার করি। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মোবাইলে বাসা বাঁধা এই ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়া খাবারের সঙ্গে লালায় মিশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে শরীরে।
টয়লেটের সিটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি জীবাণু থাকে ফোনে, বাথরুমে ফোন নিয়ে যাওয়া কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা আপনি ভাবতে পারেন না! অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাওয়ারদের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, টয়লেট আসনের চেয়ে স্মার্টফোনে ১০ গুণ বেশি ব্যাকটিরিয়া থাকে। বাথরুম ব্যবহারের পর হাত ধুয়ে ফেলি, তবে স্মার্টফোনটি পরিষ্কার করতে ভুলে যাই। ফলস্বরূপ রোগজনিত জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া তাদের সঙ্গে আটকে থাকে যা সহজেই সংক্রমণের কারণ হয়ে থাকে।
প্রযুক্তিটি আমাদের জীবনকে কতটা সহজ করে তুলেছে তা নয়, তবে সর্বদা এর ব্যবহার আপনাকে মানসিক চাপ দেওয়ার একটি বড় কারণও বটে। এমনকি যদি আপনি বাথরুমেও ফোনটি ব্যবহার করতে থাকেন তবে স্ট্রেস এবং হতাশা থাকা স্বাভাবিক। বাথরুমে ফোনটি নিয়ে, আপনি আপনার মন এবং স্বাস্থ্য উভয়ই নিয়েই খেলছেন, মনের অজান্তেই। অনেকে হয়তো নানা অজুহাত দেখিয়ে বলবেন, আমি ফোন ক্লিন করি, তাহলে তো আর সমস্যা নেই! সেই সব পন্ডিতদের বলবো, তাহলে হাঁতের সাথে ফোনটাকেও ১০ সেকেন্ড ঘসা-মাঝা করে নিন হাতের সাথে পানির সাথে, তাহলে আরও পন্ডিত্ব দেখাতে পারবেন!!
একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন, আপনার বাথরুম যত পরিস্কারই রাখুন না কেন! আপনি যখন টয়লেট করে ফ্লাস করেন, সেই ফ্লাসের সাথেই বাতাসে আপনার বাথরুমে উড়ে বেড়ায় রোগজীবাণুরা, তাই বাথরুমে ব্রাশ রাখার ক্ষেত্রেও সচেতনতা অবলম্বন করুন।