বাংলা ছোটগল্পের জীবন্ত কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। আজ তার জন্মদিন। ৮২ কছর পেরিয়ে ৮৩-তে পা রাখলেন এই কথাসাহিত্যিক।
১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে তার জন্ম। হাসান আজিজুল হক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গল্পকার। এ ছাড়াও উপন্যাস, নাটক ও বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী রচনাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা নিজের গ্রামেই করেছেন। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। যৌবনের শুরুতেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। রাজনীতি করার কারণে তাকে পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। পরে তিনি ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
‘আগুনপাখি’ হাসান আজিজুল হক রচিত শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। গল্পগ্রন্থ সমুদ্রের স্বপ্ন, শীতের অরণ্য কিংবা উপন্যাস আগুনপাখি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আত্মজা ও একটি করবী গাছ, জীবন ঘষে আগুন, পাতালে হাসপাতালে, নামহীন গোত্রহীন, চলচিত্রের খুঁটিনাটি, মা মেয়ের সংসার, বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প, সক্রেটিস, বৃত্তায়ন, শিউলি, ফিরে যাই ফিরে আসি, উঁকি দিয়ে দিগন্ত- ইত্যাদি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের মধ্যে রয়েছে- একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা, লাল ঘোড়া আমি, ফুটবল থেকে সাবধান- ইত্যাদি।
সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে গোবিন্দচন্দ্র দেব রচনাবলী, একুশে ফেব্রুয়ারি গল্প সংকলন, জন্ম যদি তব বঙ্গে- ইত্যাদি।
কথাসাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে- আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭০), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উল্লাহ ও বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার।
এছাড়া ১৯৯৯ সালে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন হাসান আজিজুল হক। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার।
বাংলাদেশে আসা প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘দেশভাগের ফলে নানাভাবে, তাড়া খেয়ে, কত ভাবেই তো মানুষকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে কিছু ঘটে নাই। আমি দেশভাগের সাত বছর পরে, বলা যেতে পারে নেহাতই পারিবারিক কারণে এই বাংলায় এসে লেখাপড়া শুরু করি। আমার দিদি খুলনায় থাকতেন, তার কাছে আসি। তাদের কাছে ৫৪ সাল পর্যন্ত ছিলাম। তখন বুঝিনি একটা আলাদা দেশ হয়েছে। এর ফলে আমার মধ্যে একটা ক্ষতের সৃষ্টি হলো। চিরকালের যে বাংলা, তা একেবারে ভেঙে ভাগ হয়ে গেলো। এখানে আসার পরে আমি তো এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেলাম। স্বভাবতই এই সমাজ, এই দেশ নিয়েই ভাববো। ইতিহাসে যা কিছু হয়েছে তা মেনে নিতে হয়। চিরকাল বলে যাবো, যে বাংলাদেশ দেখছি তা আমার মন-প্রাণ অধিকার করে আছে।’