১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে এবং সেই সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন শুরু হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘দেশটা কি কারও বাপ দাদার সম্পত্তি? ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই সমাবেশ হবে। এটা জনগণের ঘোষণা। এখনো তো আসল ঘোষণা দেইনি, আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখ। সেদিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন।’
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ফখরুল এসব কথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া নিহতের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবো। আমাদের দাবিও পরিষ্কার। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ গণসমাবেশ। শাওন, নূরে আলম, আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদ, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, দেশের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ গণসমাবেশ। এখানে কোনো প্রকার ছাড় নেই। এক দফা এক দাবি, এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। এ সরকারকে যেতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের সবার জীবন নিয়ে খেলছে। আমাদের সাতজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। জেগে উঠতে হবে। এমনি এমনি কেউ ক্ষমতা থেকে সরে না, সরাতে হবে। সাধারণ মানুষের শক্তি দিয়ে এদেরকে চলে যেতে বাধ্য করতে হবে।’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা সাতটি সমাবেশ করেছি, সব সমাবেশে বাধা দিয়েছে সরকার। তারা ভীরু, কাপুরুষের মতো গাড়ি বন্ধ করে দেয়, লঞ্চ বন্ধ করে দেয়, লেগুনা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তাতে কি সমাবেশ বন্ধ করতে পেরেছে? তিন ঘণ্টার সমাবেশকে বিএনপি নেতাকর্মীরা তিনদিনের সমাবেশে পরিণত করেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা কোনো নিষেধাজ্ঞা চাই না, এটা দেশের জন্য লজ্জাকর। কিন্তু এ লজ্জার জন্য দায়ী কে? নিশ্চয়ই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা চাই না কোনো বাহিনী আবার সেই নিষেধাজ্ঞায় পড়ুক। পরিষ্কার করে বলতে চাই, জনগণের প্রতিপক্ষ কেউ হবেন না। জনগণকে কখনোই ছোট করে দেখবেন না। জনগণ এ দেশের মালিক। শেখ হাসিনা নয়, আওয়ামীও লীগ নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য মানুষের অধিকারের জন্য। মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। এ বাংলাদেশ তৈরির জন্য, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য যুদ্ধ করিনি। বর্তমানে সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ তাদের দুর্নীতি, অহংকার দিয়ে এ দেশের মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, তারা হচ্ছে মালিক। আর বাকি আমরা হচ্ছি চাকর-বাকর। তারা হচ্ছে রাজা, এ দেশের মানুষ হচ্ছে প্রজা।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক।
এসময় আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সারাফত আলী সপু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।