সম্পর্ক ডেস্ক : লকডাউনের কারণে চলছে না বাস ট্রেন। আয় এবং কর্তব্যের টানে ১২০ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেল চালিয়ে এসে কাজে যোগ দিয়ে উদাহরণ তৈরি করলেন আটত্রিশ বছর বয়সের জ্যোতির্ময় ঘোষ।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কালনা ডিপোতে নিরাপত্তা রক্ষীর চাকরি করেন এই জ্যোতির্ময়। ডিপোতে ফিরে আসার পর এই বীরত্বপূর্ণ ফেরার জন্য তাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন সহকর্মীরা।
জ্যোতির্ময়ের বাড়ি মুর্শিদাবাদের তালিবপুর এলাকার মাতোয়া গ্রামে। ২১ মার্চ বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। ২৪ মার্চ জারি হয় লকডাউন। ফলে আটকা পড়ে যান তিনি।
জ্যোতির্ময় জানান, বাড়িতে থাকলেও নিয়মিত ডিপোর খোঁজখবর রাখতেন। সম্প্রতি জানতে পারেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পাঠানো, স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের মতো জরুরি কাজে সরকারি বাসের প্রয়োজন পড়ছে। এর পরে কী-ভাবে কাজে যোগ দেবেন, শুরু হয় চিন্তা।
তিনি জানান, বাড়িতে একটি ভাঙা সাইকেল ছিল। ‘লকডাউন’-এর মধ্যেই এক বন্ধুকে দিয়ে সাইকেলটি মেরামত করিয়ে নেন তিনি। বেঁধে নেন ছোট গ্যাস, রান্নার বাসন, শুকনো খাবারের মতো প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস। সাইকেলেই রওনা দেন কালনা।
জ্যোতির্ময় বলেন, ‘কোনো দিন এতটা রাস্তা সাইকেল চালাইনি। রোদের তাপে টানা সাইকেল চালাতেও পারছিলাম না।’
রাস্তা পথে মাঝে মাঝে গাছের তলায় সাইকেল রেখে বিশ্রাম নেন। তার পর ফের ছোটেন। পথে সাইকেলের চাকা পাংচারও হয়ে গিয়েছিল। তবে স্থানীয় ভাবেই মেরামত করে নেন। অবশেষে ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় এসে কালনা পৌঁছান।
পথে কষ্ট হলেও শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কাজে যোগ দিতে পেরে খুশি তিনি।
তিনি আরো জানান, বাড়িতে স্ত্রী, মেয়ে, বৃদ্ধ মা রয়েছেন। তারা বারবার নিষেধ করেছেন, উদ্বিগ্ন হয়েছেন। কিন্তু এই সময়ে কাজে যোগ দেওয়াটা জরুরি বলে তাদের বুঝিয়েছেন।
ডিপো ইনচার্জ সৌমেন দাস বলেন, ‘উনি নিজের উদ্যোগেই কাজে এসেছেন। কাজের প্রতি জ্যোতির্ময়ের নিষ্ঠা খুবই প্রশংসনীয়।’
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা