আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, গত ১৫ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। আগামী ১০-১৫ বছরে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের সপ্তম আসরের চূড়ান্ত পর্বে পুরস্কার বিতরণ শেষে তিনি বক্তব্য দেন। এবার ৬ ক্যাটাগরিতে ১২ সংগঠনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। দেশের তরুণদের সংগঠন ইয়াং বাংলার পক্ষ থেকে ২০১৫ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয় বলেন, ‘আমি দেশের তরুণদের প্রতি, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। অনেক প্রশ্ন আছে, দেশের অনেক সমস্যা আছে। তবে আমার যে বিষয়ে গর্ব হয়, আপনারা শুধু সমস্যা নিয়ে চিন্তা করেন না; আপনারা সমস্যার সমাধান চিন্তা করছেন, সমাধান বের করছেন ও বাস্তবায়ন করছেন। আমি শুরু থেকে বাংলার তরুণদের বলছি, আমরা দেশ হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশের তরুণরাও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নিজের উদ্যোগে নিজের কর্মসংস্থান আপনারা বের করে নিতে পারেন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় যত সমস্যা আছে, দুর্নীতি বা অন্য সমস্যাও আপনারা সমাধান করতে পারেন। শুধু সরকার পারে তা না, আমরা সবাই সব সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি।’
এ সময় জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ও শীর্ষ বাছাই হওয়া সকল সংগঠনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘৭০০ এর বেশি সংগঠন আবেদন করেছে। সবাইকে আমরা পুরস্কৃত করতে পারিনি। কিন্তু সবার জয়ই বাংলার জয়। আপনাদেরও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।’
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য যেভাবে কাজ করছেন; মানুষের জন্য, পরিবেশের জন্য যে চিন্তা করছেন, পরিশ্রম করছেন, তা অসাধারণ। আমাদের স্বপ্ন ছিল, তরুণরা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনারাই হচ্ছেন দেশের ভবিষ্যৎ। আমাদের চিন্তা হচ্ছে, বর্তমান নয় শুধু, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আপনারা সেটা দেখিয়ে দিচ্ছেন। গত ১৫ বছর ধরে উন্নয়নের যে ধারা, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা শুরু করেছিলাম, বাংলাদেশ তখন ছিল দরিদ্র দেশ, এখন হয়ে গেছি মধ্যম আয়ের দেশ।’
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেষ্ঠ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশ। নতুন সমস্যা, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ। এই সমস্যাও কিন্তু দূর করা যায়। আমরা জানি, গত তিন নির্বাচন ধরে তাদের এই নির্যাতন, প্রত্যেক নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে তারা এই জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। এটার মোকাবিলা কী? খুব সহজ। মোকাবিলা হচ্ছে, সামনের নির্বাচনে ভোট দেবেন; যারা জ্বালাও-পোড়াও করছে, তাদের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের ভোট দেবেন। নৌকায় ভোট দেবেন।’
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে এত দূর আসবে, এই গতি যদি ধরে রাখা যায়; আগামী ১০-১৫ বছরে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। আর আগামী ১০-১৫ বছরে দেশে বিএনপি-জামায়াত বলে কোনো দল টিকবে না, তখন দেশে শান্তি আসবে। এই জঙ্গিবাদ, মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশ থেকে মুছে যাবে।’
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ নেই জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র জয় বলেন, ‘অনেকে মৌলবাদীদের, সন্ত্রাসীদের উসকাচ্ছে। যেহেতু নির্বাচন সামনে, আমি আপনাদের অনুরোধ করব, এদের কথায় কান দেবেন না। বিশেষ করে আমাদের অনেক বিদেশি রাষ্ট্রদূত নির্বাচনের আগে অনেক বেশি কথা বলা শুরু করেন। ঠিক তখনই এই সন্ত্রাস, সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়। তবে চিন্তা করবেন না, যেদিন নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে, তারাও চুপ হয়ে যাবে। আর বেশি দিন নেই। মাত্র দেড় মাস। সামনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইলে একটি উপায়, আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’
সপ্তমবারের মতো দেশ গঠনে এগিয়ে আসা একদল তরুণের হাতে উঠলো জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। ছয় ক্যাটাগরিতে তরুণদের ১২টি সংগঠনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। বিজয়ী ১২ তরুণদের সংগঠন হলো- উইমেনস ড্রিমার ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, স্বপ্ন: এক চিলতি হাসির জন্য, ঋতু হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন, এফএপিএ বাংলাদেশ, ক্লিয়ার কনসেপ্ট, টিম অ্যাটলাস, নুপম ফাউন্ডেশন, আলট্রাস্টিক পিউপিলস ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (এপিওয়াইও), ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ (ডব্লিউএসআরটিবিডি), ইকো-নেটওয়ার্ক গ্লোবাল, অভিনন্দন ফাউন্ডেশন, টঙ্গের গান।
জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পাওয়া সংগঠনগুলো ছাড়াও ৩০০টির বেশি সংগঠন নিয়ে ইয়াং বাংলা বর্তমানে তারুণ্যের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই সংগঠনগুলোসহ ইয়ং বাংলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক ও ৩ লাখের বেশি সদস্য। ২০২২ সালের মে মাসে ইয়াং বাংলার সদস্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তারুণ্যের বৃহত্তম প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা ২০১৫ সাল থেকে দিয়ে আসছে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। এর আগের ৬ আসরে ১৪৫ তরুণদের নেতৃত্বাধীন সংগঠনকে সম্মানিত করা হয়েছে এই অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে তাদের সাফল্যের গল্প।