লিবিয়ার তারহৌনা শহরের শ্রমিকরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গণকবরগুলো থেকে মৃতদেহ উত্তোলন করছে। দেশটিতে এক দশকের সংঘর্ষ এবং একটি ভঙ্গুর শান্তি পরিকল্পনার জন্য কী দাম দিতে হয়েছে এই মানুষদের গণকবরগুলো যেন সেই চিত্রটিই দেখিয়ে দিচ্ছে।
২০১২ সালে স্থানীয় মিলিশিয়া কানিয়াত তারহৌনা শহরটি দখল করে নিয়েছিল। গত বছর ত্রিপোলি সমর্থিত সরকারি বাহিনী কানিয়াতের কাছ থেকে শহরটি দখল করে নেয়। শহরটি ছেড়ে যাওয়ার আগে কানিয়াত এক দশকের নৈরাজ্য ও সহিংসতার চিহ্ন রেখে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ৭৬ বছরের মাবরুকা সালেহ আবু কালেশের ভাই ও দুই ছেলেকে হত্যা করেছিল কানিয়াত।
তিনি বলেন, ‘যারাই তাদেরকে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল তাদের সবাইকে তারা হত্যা করেছে। কোনো শিশু কিংবা নারীকে তারা বাদ দেয়নি। কাউকে তারা ছাড় দেয়নি।’
প্রতি শনিবার নগরীর প্রধান চত্বরে নিহত কিংবা নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা বিচারের দাবিতে জড়ো হন। তারা এসব হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত ও হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধান চত্বরের কাছাকাছি এলাকা থেকে শ্রমিকরা এখনও লাশ বের করছে। এখনও পর্যন্ত ২০৩টি লাশ পাওয়া গেছে এবং ৫২ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা এ পর্যন্ত ৩৭৫ জন নিখোঁজ ব্যক্তির খবর জানিয়েছেন।
উসামা আল সুয়াইহ নামে প্রকৌশলের এক শিক্ষক জানান, ২০১৩ সালে ত্রিপোলির কারাগার থেকে তার ভাইকে তারহৌনাতে নিয়ে আসে কানিয়াত। সংক্ষিপ্ত বিচার করে কারাপোশাকে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। দুই বছর পর মিলিশিয়ারা ট্যাংক দিয়ে তার বাড়ির ওপর হামলা চালায়। ওই সময় তারা বাবা নিহত হয়। কানিয়াতের হাতে প্রাণ হারিয়েছে তার তিন ভাই, দুই চাচা ও দুই চাচাতো ভাই।
সম্প্রতি লিবিয়ার জাতীয় সরকারের প্রতিপক্ষ খলিফা হাফতারের বাহিনী লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগ দিয়েছে কানিয়াত। জাতীয় ঐক্যের সরকার গড়তে জাতিসংঘ সমর্থিতক সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে হাফতার বাহিনী। আগামী ডিসেম্বরে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে হাফতার যদি জয় পান তাহলে লিবিয়ার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
আবু কালেশ বলেন, ‘তারা যদি হাফতারকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বসায় তাহলে তিনি পুরো লিবিয়াকে গণকবরে পরিণত করবেন।’