ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন সুমন প্রায় ৬ মাস ধরে অফিস করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে তিনি নিজ এলাকায় থাকছেন না। ফলে পৌরসভার দাপ্তরিক ও উন্নয়নকাজে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরবাসী। তবে মেয়রের দাবি, নিরাপত্তার অভাবে তিনি এলাকায় এবং অফিসে যেতে পারছেন না।
এদিকে, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, কাউন্সিলরদের মধ্যে উন্নয়নের বরাদ্দ বণ্টনে অনিয়মসহ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন তারই পৌরসভার ১০ কাউন্সিলর।
লিখিত অনাস্থাপত্রে বলা হয়েছে, মেয়র ইকবাল হোসেন সুমন ২০১৮ সালে পৌরসভার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মোট ৬২টি প্যাকেজে সাড়ে ৬ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করেন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই। যা পরবর্তীতে নিজস্ব ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামমাত্র কাজ করিয়ে আগাম কমিশন বাগিয়ে নিয়েছেন। যার বিল এখনো পাননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।
পরবর্তী অর্থ বছরে রাজস্ব তহবিল থেকে পৌর ভবনের আশপাশ মাটি দিয়ে ভরাট প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে প্রায় ৬৭ লাখ টাকা বিল উঠিয়ে সিংহভাগ নিজের পকেটে পুড়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৌরসভার গাড়ি ঢাকায় নিজের ব্যবসার কাজে লাগিয়েছেন। এছাড়া, সরকারি কোষাগার থেকে অস্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন জ্বালানি তেলের টাকা।
পৌরসভার আয়তন অনুযায়ী মাস্টাররোলে ১৬ জন লেবার ও সুইপার নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মেয়র তার নিজস্ব অনুগামী ৫০-৬০ জনকে নিয়োগ দিয়ে রাজস্ব তহবিল লোপাট করেছেন। বিগত সাত বছর ধরে পৌর পরিষদের সভা আহ্বান না করা, বিধি-বহির্ভূতভাবে তাজমুন নামে এক ঠিকাদারকে পিএস বানিয়ে কার্যবিধি অমান্য করা, সেই সঙ্গে পিএস তাজমুনের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স ‘টিপু সেভেন এক্সসরিজ’ এর মাধ্যমে পৌরসভার অধিকাংশ টেন্ডার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিম্নমানের কাজ করিয়ে বিল উত্তোলনসহ নানা অভিযোগের কথা অনাস্থাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
পৌরসভার কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ আরিফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, পৌরসভায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করে মেয়র গা ঢাকা দিয়েছেন। পালিয়ে থেকে নিজের অনিয়ম আড়াল করতে সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অনেক ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ দেওয়ার নামে অগ্রিম টাকা নিয়েছেন। এখন পাওনাদারদের ভয়ে এলাকায় আসছেন না। আমরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেছি। পৌরসভার স্বাভাবিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য জনস্বার্থে বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।
অভিযোগের বিষয়ে গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, আমার বন্ধুর দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্যের নির্দেশে আমাকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। আমার লোকদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। আমাকে অন্যায়ভাবে পৌরসভা ছাড়া করা হয়েছে। আমি এখন ঢাকায় বসবাস করি এবং ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দাপ্তরিক কাজ করি।
এদিকে, গফরগাঁও পৌরসভার এমন বেহাল দশার কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পৌরবাসী। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখন মেয়রের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন কাজের জন্য সেবা গ্রহীতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন পৌর কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।