ডাঃ তাবাস্সুম উর্মি রোজা
অধিকাংশ সময়ই সেল ফোনটিকে হাতছাড়া করতে চাই না আমরা। সারাক্ষণ ফোনে মুখ গুঁজেই কেটে যায়। তা সে গেম খেলা হোক বা স্ক্রোলিং, নোটিফিকেশনের শব্দে সারাক্ষণ সজাগ থাকি আমরা। এমনকি ঘুমোনোর সময় ফোনটা মাথার কাছে রেখেই ঘুমোয় বেশিরভাগ মানুষ। যদি দিনের পর দিন এভাবেই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, তাহলে সাবধান হতে হবে। কারণ ঘুমোনোর সময় পাশে ফোন রাখলে, একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক-
ঘুম ধরার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায় – অনেকেই আছেন, বিছানায় পড়া মাত্র ঘুমিয়ে যান। নিয়মিত ভালো ঘুম হয়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে ঘুম আসতে চায় না। এক্ষেত্রে রাত জেগে থাকার অভ্যাস, অনিদ্রা বা ঘুম না ধরার পিছনে ফোনও কিন্তু একটি বড় সমস্যা। বেশ কয়েকটি সমীক্ষাতেও একই তথ্য উঠে এসেছে। আসলে ঘুমোতে যাওয়ার আগে শরীর ও মস্তিষ্কও একটা প্রস্তুতি নেয়। হালকা হতে চায়। কিন্তু ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেম খেললে, সোশ্যাল সাইটে চ্যাটিং করতে থাকলে ঘুমোনোর জন্য সেই শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায় না।
স্লিপ সাইকেলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় – অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের সঙ্গে মানুষজনের সার্কাডিয়ান রিদমের একটি যোগ রয়েছে। এটি স্নায়ুতন্ত্রের কাজকেও প্রভাবিত করে। স্বভাবজাত ভাবে ঘুমের একটি চক্র থাকে। অর্থাৎ মানুষ মাত্রই একটি স্বাভাবিক স্লিপ সাইকেল রয়েছে। যা সম্পূর্ণ হওয়া মাত্রই ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু রাত জেগে ফোন ব্যবহার করলে, বা ফোনের প্রতি আসক্ত থাকলে সেই স্লিপ সাইকেল ব্যাহত হয়। এক্ষেত্রে ফোনের এই ব্লু লাইট থেকে বাঁচতে হলে ঘুমোতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে থেকেই ফোনের ব্যবহার ছেড়ে দিতে হবে।
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ – অনেকেই দাবি করেন, ফোনের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে ক্যান্সার হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও গবেষণাধীন। ১৯৯৯ সালে National Toxicology Program-এ ইঁদুরদের উপরে সেল ফোনের তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়। তাদের শরীরে ম্যালিগন্যান্ট-সহ সাধারণ টিউমারও দেখা যায়। তবে অধিকাংশ গবেষণাই এই বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে। তবে সচেতনতাই সব চেয়ে ভালো পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে ফোনটিকে দূরে সরিয়ে রাখাই শ্রেয়। যদি ঘুমোনোর সময় গান শোনা বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ কল করতে হয়, তাহলে ইয়ারবাড বা ব্লুটুথ স্পিকার ব্যবহার করা যেতে পারে। ফোন ও মানুষের দূরত্ব বাড়লেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণের পরিমাণ কমবে।
তাহলে রাতে কীভাবে ঘুমোনো উচিৎ? এক্ষেত্রে রাতে ঘুমোনোর সময় অন্য ঘরে ফোন রাখা যেতে পারে। যদি একান্তই বেড রুমে রাখতে হয়, তাহলে অন্তত তিন ফুটের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যদি একটু খেয়াল রাখা যায়, তাহলে ঘুম ভালো হবে। আর ঘুম ভালো হলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।