বাংলাদেশ হাইকমিশন, অটোয়া: ১৭ মার্চ ২০২১ কানাডা কর্তৃক বাংলাদেশের জাতির জনক ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে কর্মসূচীর অংশ হিসাবে দিবসের শুরুতে সকাল ১০টা ঘটিকায় বাংলাদেশ হাউজে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মান্যবর হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান এবং এ সময় অত্র হাইকমিশনের উপ-হাইকমশিনারসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। পতাকা উত্তোলনের পর বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দিবসের পরবর্তী কর্মসূচী বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিলনায়তনে শুরু হয় বিকাল ৫.৩০ ঘটিকায়। শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে হাইকমিশনারের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং কেক কেটে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর এ দিবস উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্তবাণীগুলো অত্র হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ পাঠ করে শোনান। বাণী পাঠের পর বঙ্গবন্ধুর জীবনও অবদানের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বাণী পাঠের পর বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মান্যবর হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান। উক্ত ভার্চুয়াল বিশেষ আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব ও স্বনামধন্য কবি ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর, কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব গোলাম মাহমুদ মিয়া, কানাডা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আজিজুর রহমান প্রিন্স, সাবেক ছাত্রনেতা জনাব রবিউল আলম এবং বাংলাদেশের রাজনীতির একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র, সাবেক কেবিনেটমন্ত্রীও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব তোফায়েল আহমেদ, এমপি।সর্বশেষে এ অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামীজীবন ও তার জীবনাদর্শ তুলে ধরেন। সকলে একমত প্রকাশ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব শুধু তৎকালীন সময়েই নয় এ ধরনের নেতৃত্ব সমসাময়িক বিশ্বে এখনও বিরল। বক্তারা সকলেই বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর মন ছিল হিমালয়ের মতো বিশাল এবং নেতৃত্ব দানে তার সিদ্ধান্ত ছিল সব সময় পর্বতের মতো অটল। তিনি সব সময় সাধারণ মেহনতী মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন এবং কাজ করে গেছেন। এজন্য বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশেই নয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট নায়ক হিসাবে তাকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দরাও আকুন্ঠ সমর্থন দিয়েছিলেন। তিনি সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় মানুষের মনে জাগিয়েছেন সে পদাংক নিয়েই তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে দূর্বারগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তার মন সব সময় দরিদ্র ও দুস্থ শিশুদের জন্য কাতর হয়ে থাকত। তিনি স্কুলে পড়ার সময়ে অন্য অভাবী শিশুদের নিজের জিনিস দিয়ে সাহায্য করতেন বলে অনেক বক্তা তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।বিশেষভাবে বাংলাদেশের রাজনীতির একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ও সাবেক কেবিনেটমন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেন যে, ১৯২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল। তিনি আরো বলেন যে, বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই বুঝেছিলেন যে, পাকিস্তান বাঙালীদের জন্য সৃষ্টি হয়নি। সেজন্যই বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সাল থেকে নেতৃত্ব দান করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন।
মান্যবর হাইকমিশনার সভাপতির বক্তব্যে শুরুতেই জাতির জনকসহ সকল শহিদকে বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেন। তিনি উপস্থিত সকলকে এবং বিশেষভাবে আমন্ত্রিত অতিথিদের তাদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা সম্বলিত বক্তব্য প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো বলেন যে, এ বছরটি খুবই তাৎপর্যপূণর্ কারণ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী আমরা এক সাথে উদযাপন করছি। এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনও বিশেষ তাৎপর্য বহন করে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন যে, বঙ্গবন্ধু শিশুদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা ও সর্বোপরি তাদের কল্যাণের ব্যাপারে শুরু থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।তিনিএ প্রসঙ্গে উল্লেখকরেন যে, স্বাধীনতার পরবর্তীকালে জুলিয়ান ফ্রান্সিস নামে একজন বিদেশি অক্সফ্যামেরকার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু করার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর সাথে স্বাক্ষাৎ করেন। উক্ত সাক্ষাতের সময় বঙ্গবন্ধু জুলিয়ান ফ্রান্সিসকে বিশেষভাবে শিশুদের কল্যাণের বিষয়ে কিছু করার ব্যাপারে আহ্বান জানান। পরবর্তীতে জুলিয়ান ফ্রান্সিস বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পত্রিকায় একটি আর্টিকেল লিখেন। যেখানে তিনি বলেন, “আমি ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করি এবং একটি বিষয় পরিস্কার হই যে, বঙ্গবন্ধু শিশুদের বিষয়ে অসাধারণ স্নেহ ও যত্নশীল ছিলেন।” হাইকমিশনার জুলিয়ান ফ্রান্সিসের এ উক্তির উল্লেখ করে বলেন যে, বঙ্গবন্ধু শিশুদের কল্যাণ এবং অধিকারের বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ শুরু থেকেই নিয়েছিলেন। এজন্য তিনি স্বাধীনতার পর পরই এগারো হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই শিশুদের জন্য বিনামূল্যে পুস্তক প্রদানের বিষয়টি সরকারি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল যাতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অব্যাহত রেখেছেন বলে হাইকমিশনার মতপ্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধুই ‘শিশু আইন’ প্রণয়ন করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন, ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য সকল অভিভাবককে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।তিনি একই সাথে সকলকে অবহিত করেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত করতে সকলের সাথে অত্র হাইকমিশনও কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য তিনি সকলকে যার যার অবস্থান থেকে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। পরিশেষে মান্যবর হাইকমিশনার আবারও বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তার বক্তব্য শেষ করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এরপর দিবসটি উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন মান্যবর হাইকমিশনার। ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত সকলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন এবং এর মাধ্যমে দিবসটি উদযাপনের সকল কর্মসূচির পরিসমাপ্তি ঘটে।