২৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ায় ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ইডেন কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন।
তিনি চারবারের সফল রাষ্ট্রনায়ক; তিনবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি ৩৯বছর ধরে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করে আসছেন।
দুরদর্শী নেতৃত্ব ও সুদুর প্রসারী কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশন এবং উন্নয়নশীল ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কেটেছে। জেলখানায় বাবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের সময় অনেক রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনা। দলের খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা জানাতেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে। এভাবেই শুরু হয় তার রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে ছয় দফা, ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। তখন শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের। তার সফল দুরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ চার-চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। বর্তমানে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে।
এদিকে গত কয়েক বছরের মতো এবারের জন্মদিনেও শেখ হাসিনা দেশের বাইরে। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন। গত ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিবছরই শেখ হাসিনার জন্মদিন কাটে দেশের বাইরে।
প্রতিবছরই সেপ্টেম্বরের এই নির্ধারিত সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রেই তাকে থাকতে হয়।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে।
১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে।
তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কারাবন্দি বাবা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকচক্রের হাতে জাতির জনককে সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলেন। এরপর জার্মানি থেকে ভারতে এসে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে থাকেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরার আগে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক চ্যালেঞ্জিং জীবন।
অনেক চড়েই-উৎরাই পেরিয়ে তাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বারবার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হন। তার উপরে গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি কারা ভোগ করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা হয়ে উঠেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপরিচালনায় সফলতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা পুরস্কার ও সম্মানসূচক ডিগ্রিতে ভূষিত হন তিনি। বিভিন্ন দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি এবছর জাতিসংঘে মর্যাদাপূর্ণ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার পেয়েছেন শেখ হাসিনা।
একই সঙ্গে তারুণ্যের দক্ষতা উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা-ইউনিসেফ শেখ হাসিনাকে দিয়েছে ‘চাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সন্মাননা।
রাজনৈতিক কর্মব্যস্ত জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম ইত্যাদি।