জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আকারের দিক থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে এটি সবচেয়ে বড় বাজেট। ঘাটতিও সবচেয়ে বেশি। বাজেট ঘাটতি প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৪ হাজার কোটি টাকা।
এটি বাংলাদেশের ৫০তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের করা তৃতীয় বাজেট এটি।
করোনারাভাইরাসের থাবায় বিধ্বস্ত অর্থনীতির মধ্যেও তিনি ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়ন, কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত এবং দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সংসদ কার্যক্রম শুরু হয়।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন।
সংসদে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে আগামী ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।
বাজেট উপস্থাপনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বিশেষ বৈঠকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন দেওয়া হয়।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। তবে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে না পারা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, নতুন বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বেশি।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর কর খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে আয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৮১ কোটি টাকা। এরমধ্যে পরিচালন আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যয় খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা।
বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে (অনুদানসহ) পাওয়া যাবে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।