স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যতজন মানুষের হাত ধরে নাট্যাঙ্গন বিকশিত হয়েছে তাদের অন্যতম মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। নির্দেশক, সংগঠক, শিক্ষক, লেখক, সমালোচক ও অভিনতা—বহুরূপে নাট্যাঙ্গনকে আলোকিত করেছেন তিনি। ঈর্ষা, গ্যালেলিও, ওয়েটিং ফর গডো, হিম্মতি মা, বাংলার মাটি বাংলার জল প্রভৃতি নাটকে তার নির্দেশনার জাদু দেখা গেছে।
১৯৪১ সালের ১৮ জুন নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন আতাউর রহমান। জন্মদিন উপলক্ষে বাসায় কেক কেটেছেন তিনি। তবে বিশেষ কোনো আয়োজন করেননি। করোনার এই সংকটকালে অন্তর্জালে ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি।
আতাউর রহমান শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা পরিবারে বেড়ে উঠেছেন এবং কৈশোরে রবীন্দ্র সাহিত্যে বোঝাপড়া শুরু। স্কুলবেলাতেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নটীর পূজা’ নাটক দেখে তার মঞ্চপাঠ শুরু। ষাটের দশকের কথা, আতাউর রহমান তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে সময় ২৬ মার্চ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ শেষে একদিন হঠাৎ করেই জিয়া হায়দার থিয়েটার করার প্রস্তাব দেন। তার অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’। নাট্যদলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম আতাউর রহমান।
১৯৭২ সালে নাগরিকের ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এর মাধ্যমে নাট্য নির্দেশনা শুরু, এরপর তিনি নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের লেখা ‘বাকি ইতিহাস’। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাটক প্রদর্শন শুরু হয়। এরপর নিজের দল ও অন্য দলের হয়ে অসংখ্য নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনায় নাগরিকের উল্লেখযোগ্য নাটক হলো— ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘ভেঁপুতে বেহাগ’, ‘মাইলপোস্ট’, ‘সাজাহান’, ‘গডোর প্রতিক্ষায়’, ‘কবর দিয়ে দাও’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ঈর্ষা’, ‘হিম্মতি মা’, ‘রক্তকরবী’, ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘ত্রয়লাস ও ক্রেসিদা’, ‘এখন দুঃসময়’ এবং ‘অপেক্ষমাণ’।
নিজ দলের বাইরে তার উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা হলো—‘আগল ভাঙার পালা’, ‘গণনায়ক’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘ডেড পিকক’, ‘দণ্ডধর’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘তাশের দেশ’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘নারীগণ’ এবং ‘রুদ্র রবি ও জালিয়ানওয়ালাবাগ’। সব মিলিয়ে তার নির্দেশিত নাটকের সংখ্যা ত্রিশের কোটা পেরিয়েছে, যা তাকে দিয়েছে বাংলার মঞ্চাঙ্গনের জনপ্রিয় ও সফল নাট্যনির্মাতাদের অন্যতম হওয়ার সম্মান।