আবরার চলে গেছে। আবরার আর ফিরবে না। যে যায় সে আর ফেরে না। আবরারের মায়ের কোল শূন্য করে আবরার চলে গেছে। এই শূন্যতা আর কেউ পূরন করতে পারবে না। কেউ ভরিয়ে দিতে পারবে না আবরারের মায়ের কোল। যার যায় সেই বোঝে সন্তান হারানোর ব্যাথা। ঘুমহীন রাতে সন্তানের কথা মনে করে নীরবে চোখের পানি ফেলবে আবরারের মা। আবরারের বাবা। আবরারের ভাই বোন। আবরারের বন্ধুরা। কেউ তা দেখবে না। কেউ তা জানবে না। কেঁদে কেঁদে চোখ অন্ধ হয়ে গেলেও কার কি যায় আসে! একদিন আমরা আবরারের কথা ভুলে যাব। আবরারকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার হবে। বিচারে তাদের কি শাস্তি হবে এটা একমাত্র আদালত জানে। কিন্তু আমৱা কি একবারও ভেবে দেখেছি কেনো তারা এই পথে গিয়েছে! একজন দু’জন না উনিশ বিশজন তরুণের এই রকম মিলিট্যান্ট, এই রকম ব্রুটাল, সহপাঠির উপর এ ৱকম নিষ্ঠুর হওয়ার কারন আমরা খতিয়ে দেখেছি কখনো! এতগুলো তরতাজা তরুণ যাদের সামনে ছিল উজ্জল ভবিষ্যত, যারা বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারত আজ তাদের জীবনও বিপন্ন। তাদের পরিবারের লোকদেরও চোখের পানি ঝড়ছে। এক আবরারের সাথে আরো অনেকগুলো পরিবার শোকাচ্ছন্ন আজ। ক্ষতবিক্ষত। কিন্তু কেনো তারা এই পথ বেছে নিল? কে এজন্য দায়ী? কেনো তাদের সঠিক পথ দেখানো হয়নি! কেনো তাদের শেখানো হয়নি ন্যায় অন্যায়! নিশ্চয়ই এইসব তরুন প্রাণ সঠিক গাইড পেলে এভাবে বিপথগামী হতো না। সেজন্যে পরিবারের যেমন তেমনি সমাজের, রাষ্ট্রের, শিক্ষা পতিষ্ঠানের ভূমিকা আছে। কেউ সেই ভূমিকা পালন করেনি। দলদাস ভিসি এবং শিক্ষকরা এই দায় এড়াতে পারে না। পারেনা রাজনীতিকরাও। সমাজে, রাষ্ট্রে, পরিবারে, রাজনীতিতে যখন পচন ধরে তখন এসব ঘটে। সবাই এই সমাজের অংশ। তাই আমাদের সমাজের অন্তৰ্নিহিত সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। রাজনীতি আর ক্ষমতাই সব নয়। আমাদের মানবিক মানুষ তৈরী করতে হবে। আমাদের বিবেক, মানবতা, আদৰ্শ এখন গভীর কোমায়। নষ্ট রাজনীতির বলি হয়েছে এতোগুলো তরুণ প্রাণ। এর দায় কেউ এড়াতে পারে না। শুধু কয়েকজনকে শাস্তি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাঁচানোর এখনই সময়। মনীন্দ্র রায়ের কবিতার ভাষায় বলি, যে যায় সে চলে যায়/ যারা আছে তারাই জেনেছে..।
টরন্টো ১৭ অক্টোবর ২০১৯