‘ইন্ডিয়ান গার্ল!’ পার্ট-৬
আমি বলি, তোমাদের রাত নষ্ট হওয়ার জন্য আমি কি করে দায়ী হবো! আমি তো বলিই নাই আসতে।
এমন সময় ও মেয়েটা হঠাৎ করেই চোখ তুলে তাকায়। একেবারে সোজা আমার চোখের দিকে। আসলে কি যে জাদু সে চোখে। তখনকার মতোই যেন এলোমেলো হয়ে যাই খানিকটা। বুঝতে পারছি স্যামগুলো একে একে পালাচ্ছে মাথা থেকে। মহিলাটি ততক্ষনে সামলে নিয়েছে নিজেকে। বলতে শুরু করে, ‘আই থিংক ইউ এ জেন্টলম্যান। ইউ কীপ ইওর ওয়ার্ড এন্ড টেক হার।’
এবার একটু সারেন্ডারের মতো করে বলি ‘লুক, আই টোল্ড, আই এ্যাম নট দ্যাট কাইন্ড অফ ম্যান। আই ডোন্ট পিক আপ গার্লস ফ্রম দ্য স্ট্রিট।’
‘দেন হোয়াই ইউ টক্ড টু দ্য গার্লস ফ্রম দ্য স্ট্রিট?’ মহিলাটি এবার যেন জ্বলে ওঠে।
‘দ্যাট ওয়াজ সিম্পলি মাই কিউরিসিটি।’ বলি, তোমরা বলছিলে ইন্ডিয়ান গার্ল ইন্ডিয়ান গার্ল। জানার আগ্রহ হয়েছিলো ইন্ডিয়ান গার্লটা কি আর হংকংয়ের রাস্তায় ইন্ডিয়ান গার্লরা কি করছে! দ্যাট্স ইট! জানা হয়ে গেছে চলে এসেছি। বলি বেশ জোড়ের সাথেই।
মহিলাটি চুপ হয়ে যায় আমার বলার ভঙ্গিতে। আমি তাকাই ও মেয়েটির দিকে। সে তখন অন্য দিকে তাকিয়ে। ভাবছি, এতো ভালো একটা ঝামেলায় পরা গেলো! কেন তখন রাস্তায় ওদের সাথে কথা বলতে গেলাম! এখন কি এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে এ নিয়ে ঝগড়া করবো! আশেপাশে তাকাই। ভাগ্য ভালো কেউ নাই। তারপরও, আমরা কথা বলছি ইংরেজীতে। আশে পাশের কেউ শুনলে বুঝে ফেলবে ব্যপারটা। এখন মহিলাটির যে ভাবভঙ্গি তাতে তার গলা চড়ে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যে। শেষে আশেপাশের রুম থেকে লোকজন বের হয়ে এলে কি একটা বিশ্রি ব্যপার হয়ে যাবে! তাছাড়া ছোট চ্যাংয়ের গেষ্ট হাউসে আজই প্রথম এসে উঠেছি। ওরাই বা কি মনে করবে! না, ব্যপারটা বেশী বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না।
এবার গলা একটু নীচু করে বলি, দ্যাখো আমাদের এভাবে চেঁচামিচি করা উচিত না। এটা পাবলিক প্লেস। এখন অনেক রাত। আশে পাশের লোকজন ঘুমাচ্ছে।
মহিলাটিও গলা নীচু করে বলে, তাহলে একে নাও।
তাকাই সন্দিগ্ধ চোখে। বলি, তুমি কি আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাইছো!
না। আমি শুধু চাইছি তুমি ওকে তোমার রুমে নিয়ে যাও।
রোখ চেপে যায় মাথায়। বলি, যদি না নেই! এখানে সিন ক্রিয়েট করবে! একথা বলার সময় আমার গলাটা একটু চড়ে যায়।
মহিলা চুপ হয়ে যায় হঠাৎ। কিছু একটু ভেবে তারপর বলে, তো ঠিক আছে, চলো তোমার রুমে যাই। সেখানে গিয়ে কথা বলি।
কিছুটা আঁতকে উঠি। বলি, রুমে গিয়ে কি বলবো! কথা তো আমাদের শেষ।
এবার আগের মতোই প্রায় চেঁচিয়ে বলে, শেষ বললেই হলো!
যা আশংকা করেছিলাম, ভালোই ফেঁসে গেছি। এখন কিভাবে বিদায় করবো এদেরকে বুঝতে পারছিলাম না। একটু অসহায়ের মতো তাকাই ও মেয়েটার দিকে। এবং সাথে সাথে সেও চোখ ফেরায় আমার দিকে। চমকে উঠি। সেই দৃষ্টি। আবার এলোমেলো হওয়ার ব্যপার!
হঠাৎই মনে হয়, নিয়ে যাবো কি রুমে! ঠিক হবে! মেয়েটার ব্যপারটা বুঝতে পারছি না, কিন্তু মহিলা যেন একটা খান্ডারনী। শেষে যদি বের হতে না চায় রুম থেকে! তাড়াবো কিভাবে! মহিলার যে ভাবভঙ্গি, মনে হচ্ছে সে আমার দূর্বলতা টের পেয়ে গেছে। এখন গলা তার চড়তেই থাকবে। বুঝতে পারলাম, ভালোই ফেঁসেছি। শেষ পর্যন্ত কিছু টাকা আদায় করে ছাড়বে। একেই বলে আক্কেল সেলামী!
কি আর করা! নেশাটেশা চাঙয়ে ওঠে। বলি ‘ওকে, কাম। বাট ডোন্ট মেক এনি সীন, ওকে?’
মহিলাটি এবার হেসে ওঠে। বলে, আমি জানি তুমি আসলেই একটা ভদ্রলোক। এবং এই লাইনের লোক না।
চাবি দিয়ে মেইন গেট খুলতে খুলতে বলি, তাহলে আমার পিছু নিয়েছো কেন?
সে কথার কোন জবাব দেয় না মহিলা। দরজা খুললে পেছন পেছন এসে ঢোকে দু’জন। আমি আবার লক করে দেই। এ গেস্ট হাউসের নিয়মটা ভালো। সব সময় মেইন গেট লক থাকে। বোর্ডারদেরকে রুমের এবং মেইন গেটের দু’টোরই চাবি দেওয়া হয়। রিসেপশনে যদিও সব সময় কেউ একজন থাকে তারপরও মেইন গেট কখনো আনলক রাখা হয় না। গেস্ট বা যার কাছে চাবি নাই বাইরে থেকে বোতাম টিপলে রিসেপশনে বসা লোকটা মনিটরে আগন্তুককে দেখে ওখান থেকে বোতাম টিপে দরজা আনলক করে দেয়।
লাল কার্পেট মোড়া প্যাসেজটা হেঁটে এসে আমার রুমের দরজার সামনে দাঁড়াই। একেবারে শেষের দিকের রুমটা। গেস্ট হাউজটা আসলেই হাইফাই। একেবারে ঝকঝকে তকতকে। পুরো প্যাসেজ কার্পেট মোড়ানো। দেয়ালে মাঝে মাঝে ড্রাগন বা বুদ্ধের ছবি টাঙানো। লক্ষ্য করি মহিলাটি বেশ বিষ্ময়ের সাথে দেখছে চারদিক। রুমে ঢুকে আলো জ্বালি। ওরাও এসে দাঁড়ায় পেছন পেছন। মহিলা চারদিক দেখে নিয়ে সপ্রসংশ দৃস্টিতে বলে ‘নাইস রুম। ভেরী এক্সপেন্সিভ, রাইট? ভাড়া কত?’
আমি তার কথায় কোন জবাব না দিয়ে সোজাসুজি শুধাই, এখন বলো কি করতে পারি তোমাদের জন্য?
হেসে বলে, কিছুই না। আমি ওকে এখানে রেখে যাচ্ছি, এক ঘন্টা পর ফিরে আসবো।
ফিরে আসবে মানে!
একই রকম হেসে বলে, ওকে নিয়ে যেতে! এর মধ্যে তোমার যা করার তুমি করবে।
আমি ধমকে উঠি এবার, তোমাকে আর এখানে আসতে হবে না। আমি আর তোমার চেহারা দেখতে চাইনা।
মহিলাটি হজম করে ধমক। তারপর আবার একই ভঙ্গিতে হেসে বলে, ওকে রাতের জন্য রেখে দিতে চাও?
‘শাট আপ!’
‘নট টু মাচ মানি। অনলি ফাইভ হানড্রেড ডলার ফর নাইট!’ বলে মিটি মিটি হাসতে থাকে আমার দিকে তাকিয়ে।
কন্ঠ ঝাঝালো করে বলি, ‘এ্যন্ড হাও মাচ ফর গেট আউট অব হিয়ার?’ সন্ধ্যা থেকে পিছু নিয়েছে, কিছু আদায় না করে রেহাই দেবেনা। যাই নিক, তবুও এখন বিদায় হোক এখান থেকে!
মহিলা তাকায় মেয়েটির দিকে। এবার মেয়েটাও তাকায় তার দিকে। তবে কেউ কোন কথা বলেনা। আমি একে একে দু’জনের দিকেই তাকাই। একটুক্ষন চুপ থেকে মহিলা আমার দিকে ফিরে বলে, ‘থ্রি হানড্রেড।’
আমি চুপ হয়ে যাই। ভাবছি, আক্কেল সেলামি তিন শ’ ডলার! কি বলবো। বার্গেনিং করবো! ছোটলোকি হয়ে যাবে। একটু ভেবে নিয়ে বলি ‘ওকে।’ মানি ব্যাগ খুলে তিনটা হংকং শতকি বের করে ধরি। ‘টেক ইট এ্যন্ড নাউ গেট লস্ট!’
কোন কথা না বলে টাকাটা নেয় মহিলা। কিছু বলেনা। তবে বোঝা গেলো বেশ একটু অবাকই হয়েছে আমি এভাবে টাকা দিয়ে দেয়ায়। টাকাটা পার্সে রাখতে রাখতে বলে ‘ইউ ডোন্ট নীড হার?’
তাকাই মেয়েটার দিকে। ও তখন তাকিয়েছিলো অন্য দিকে। হঠাৎই খেয়াল হয় এতক্ষন আছে, এত কথা হচ্ছে মহিলার সাথে কিন্তু ও একটি শব্দও বের করেনি মুখ থেকে।
আমি মহিলার দিকে ফিরে বলি, আমি তোমাদেরকে বলেছি তোমরা ভুল লোককে ধরেছো। আমি এ লাইনের লোক না। তারপরও টাকা পেয়েছো, এখন ভাগো। ফর গড্স সেক, প্লিজ লীভ মি এলোন, ওকে!
চকিতে মেয়েটা তাকায় মহিলার দিকে। চোখদু’টো বেশ দৃপ্ত। শক্ত কন্ঠে তামিলে কিছু বলে ওঠে মহিলার উদ্দেশ্যে। আমি বুঝতে পারিনা। মহিলা তার জবাব দেয়। মেয়েটি আবার কিছু বলে। মহিলা কিছু বোঝাতে চেষ্টা করে। বেধে যায় দু’জনে বাদানুবাদ।
সে সবের কিছুই বুঝতে পারি না আমি। একবার এর একবার ওর মুখের দিকে তাকাতে থাকি। ওদের বাদানুবাদটা ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যাচ্ছিলো মনে হলো। এবার থামাতে হয়। বলি, ‘উইল ইউ প্লিজ স্টপ?’
দু’জনই হঠাৎ করে চুপ হয়ে যায় আমার কন্ঠস্বরে। দু’জনই তাকায়। বলি, কি হয়েছে? তোমরা ঝগড়া করছো কেন?
মহিলা আমতা আমতা করে বলে, সে টাকাটা নিতে চাইছে না।
অবাক হই। নিতে চাইছে না মানে! টাকার জন্যই তো সন্ধ্যা থেকে পিছু নিয়েছে। এখন মুফতে টাকা পেয়েও তা নিতে চাইছেনা মানে! শুধাই, ‘হোয়াই?’
‘শি ইজ স্টুপিড গার্ল। শি সে ইফ ইউ ডোন্ট নীড হার উই নো টেক ইওর মানি।’
চলবে…