দেলওয়ার এলাহী
সূর্য ওঠার সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠতে হল। আজ রাতের শেষ প্রহরে হুমায়ূন আহমেদ নিউইয়র্কে চিকিৎসার জন্য চলে যাবেন। এজন্য হুমায়ূন আহমেদ এবং তাঁর সার্বক্ষণিক কাছের মানুষদের নাস্তা খাওয়া হবে মাসুম রহমানের সৌজন্যে। আমিও তখন ঢাকায় এবং ঘটনাচক্রে মাসুম রহমানের বাসায়। অতএব, আমিও সেই নাস্তা পার্টির একজন।
হুমায়ূন স্যার ভোরের পাখি। সহসা তিনি ঘুম থেকে ওঠেই যদি নাস্তা খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন; তাই, যথাসম্ভব সকাল সকাল যাওয়া।
দখিন হাওয়ায় যথারীতি স্যারের দরোজা খোলা। আমি আর মাসুম রহমান কোন রকমের সাড়া শব্দ না করেই ঘরে প্রবেশ করলাম।
হুমায়ূন আহমেদ বসে আছেন মেঝেয়। পরনে লুঙ্গি, খালি গা। মিহি নরম রোদ এসে পড়েছে তাঁর শরীরে। দখিন মুখি জানালার ফাঁক দিয়ে আসা এক চিলতে আকাশের দিকে তাঁর স্থির দৃষ্টি; অপলক। তাঁর স্ত্রী কুসুম; অর্থাৎ, মেহের আফরোজ শাওন পাশে বসা। ছোট ছেলে নিনিত হুমায়ূন আহমেদের কোলে। আমাদেরকে বসতে বললেন; মেঝেয়, তাঁর পাশেই। কিছুক্ষণ পর, ক্যান্সার কিভাবে শরীরে কেমো থেরাপির ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে লুকিয়ে বেড়ায় তা বর্ণনা করলেন অসাধারণ মুনশিয়ানায়। বলা বাহুল্য যে, আমরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর গল্পটি শুনলাম।
তাঁর পাশে বসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদকে সেদিন সকালে যেভাবে কিছুক্ষণ অবলোকন করেছিলাম তার একটি ছবি আমি আঁকতে চেষ্টা করেছি মাত্র
রোদ ঠিকরে এসে লুটিয়ে পড়ল মেঝেয়,
উদোম শরীর পেয়ে মেখে দিল ওম।
নীলিমায় চেয়ে থাকতেই খুলে গেল আকাশের খিল-
তখনও কিন্তু শহর জাগেনি,
দানা বাঁধেনি মিথ্যের মিছিল-
যা কিছু অশ্রাব্য,
উৎকট,
অসহ্য কোলাহল।
আর তো কেউ নেই পাশে; নেই অরুচির দঙ্গল।
তবু, এ কিসের আলোড়ন?
স্থির দৃষ্টি ভেদ করে অনঢ় জাগায় কাঁপন!
অবিচল আপনি;
তবু বিচ্ছুরিত হয় এক অদেখা আহ্বান।
নীরবে তাকেই দেখালেন সম্মান!