ইন্ডিয়ান গার্ল!’ পার্ট-১১
হুঁ। চুপ হয়ে যাই। একটা সন্দেহ জেগেছিলো মোটা দাগের টাকা আদায়ের কোন ফন্দি কিনা। না সেসব কিছু না। টাকা চাইছে না। এখন আমার আর কোন সন্দেহ থাকা উচিত না যে মেয়েটা আসলেই বিপদে পড়েছে। এবার বলি, এছাড়া আর কিভাবে সাহায্য করতে পারি বলো!
বলে, সে আমি জানিনা। শুধু জানি এই মূহুর্তে তোমার সাহায্য দরকার। আমাকে ফিরিয়ে দিওনা, প্লিজ।
এবার একটু সিরিয়াস হতে হয়। একটা মেয়ে অসহায় অবস্থায় নিজে খুঁজে বের করে আমার কাছে এসেছে। বড় আশা করে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটা পুরুষ। মেয়েদের বিপদে পাশে দাড়ানো পুরুষের নৈতিক কর্তব্যও। আমাকে তো কিছু একটা করতে হয় ওর জন্য। কি করবো সে পরে দেখা যাবে। আপাতত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় ওকে সাহায্য করার।
বলতে যাবো কিছু ভেবো না, এ সময়ই আবার ফোন। ঘড়ি দেখি। আধা ঘন্টা পার হয়ে গেছে। তার মানে মহিলা এসে গেছে। এবার কি বলবো তাকে! জিজ্ঞাসার চোখে তাকাই। ও-ও উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আমার দিকে। কোন কথা নাই। বুঝতে পেরেছে এ ফোনের অর্থ। বলি ‘শি ইজ ব্যাক।’
করুনভাবে মাথা ঝাকাতে থাকে। বুঝতে পারি না কি বোঝাচ্ছে। চাইছে না মহিলা এখনই এসে পড়–ক এখানে! আমাদের কথা এখনো শেষ হয়নি। পরে আসতে বলবো!
বলি, তুমি চাইছো না সে এখন আসুক।
আবার মাথা ঝাকায় একই ভাবে। বলি, কিন্তু সেতো তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসে বসে আছে রিসেপশনে।
এবার ভয়ার্ত কন্ঠে বলে ওঠে, আমি যাবো না!
‘হোয়াট!’ বিষম খাই ওর কথায়। আর্ত্তনাদের মতো করে বলে চলে, প্লিজ আমাকে ওর সাথে পাঠিয়ো না। বলে হাতদু’টো জোড়বদ্ধ করে তুলে ধরে।
আমি হতভম্ব হয়ে পরি। মূহুর্ত কয়েক কথা সড়ে না মুখে। ওদিকে রিং বেজে চলেছে। ধরে কি বলবো ঠিক করে উঠতে পারছি না। মেয়েটা যেতে চাইছে না মহিলার সাথে। হতে পারে এখনই না। আরো কিছুক্ষন থাকতে চায়। কথা শেষ করে, আমার সাথে একটা বুদ্ধি পরামর্শ ফাইনাল করে তারপর যাবে।
আবার তাকাই ওর দিকে। হাত দু’টো তখনও জোড়বদ্ধ করে তোলা। চোখে করুন দৃস্টি। সেদিকে তাকিয়ে থেকেই রিসিভারটা তুলি। ওপার থেকে জানায় মহিলা এসেছে। বলি, পাঠিয়ে দাও।
আমি ফোন রাখতেই ও ভেঙ্গে পরে যেন। মহিলা আসছে। বুঝতে পারছে না এরপর আমি কি করতে যাচ্ছি। বলি, চোখ মুখ মুছে নাও। সে এসে যেন বুঝতে না পারে এতক্ষন শুধু কান্নাকাটি করেছো। বুঝেছো আমি কি বলতে চাইছি?
মুখ তোলে। পর মূহুর্তেই বুঝে নেয় ব্যপারটা। আঁচল দিয়ে চোখ মোছে। চেহারায় একটু হাসিখুশীভাব ফুটিয়ে তোলে। এ সময়েই দরজায় বেলের আওয়াজ। একটু পরখ করার মতো ওকে দেখে নিয়ে উঠি, গিয়ে দরজা খুলে দিলে রুমে এসে দাড়ায় মহিলাটি। চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি। ঢুকেই দৃষ্টি যায় তার মেয়েটার ওপর। কিছু একটা অনুসন্ধান করে সেখানে। তারপর সন্দেহের চোখে তাকায় আমার দিকে। বিষ্ময় কন্ঠে শুধায় ‘হোয়াট ইউ ডুয়িং?’
‘হোয়াট এ ম্যান ডাজ উইথ এ ইয়াং গার্ল!’ বলে আড়মোড়া ভেঙ্গে একটা সিগারেট ধরাই ।
মহিলা চুপ হয়ে যায়। তারপর কিছু বলে তামিলে। মেয়েটি জবাব দেয় না। আবার কিছু বলে। এ সময় বেশ রাগত কন্ঠে।
এবার আমি বলে উঠি ‘হাও মাচ ইউ চার্জ ফর হোল নাইট?’
দু’জনই অবাক চোখে তাকায় আমার দিকে এ কথায়। মহিলা বিষ্ময় কন্ঠে বলে ‘ইউ ওয়ান্ট হার ফর হোল নাইট!’
‘ইয়েস, আই লাইকড্ হার। শি ইজ এ নাইস গার্ল। আই নীড হার ফর রেস্ট অফ দ্য নাইট। হাও মাচ?’
কিছু একটা ভাবে মহিলা। তারপর শুধায় কিছু মেয়েটিকে তামিলে। মেয়েটি জবাব দেয়। হয়তো মহিলা জেনে নিলো সারা রাত এখানে থাকতে তার আপত্তি আছে কিনা। আমার দিকে ফিরে বলে ‘ওকে, গিভ মি টু হানড্রেড মোর।’
চকিতে মেয়েটা তাকায় তার দিকে। তারপর আমার দিকে। আমি কোন কথা না বলে ওয়ালেট খুলে দুই শ’ ডলার বের করে বাড়িয়ে ধরি। মহিলাটি পরম সন্তুষ্টির সাথে তা নিয়ে পার্সে রাখে। টাকাটা দিয়ে বেশ ঝাঁঝের সাথেই বলি ‘নাও গেট লস্ট এ্যন্ড কল মি টুমরো মর্নিং আফটার টেন, ওকে?’
‘ইয়েস।’ বেশ গদগদ হয়ে বলে মহিলা। মোটে হচ্ছিলো না এখন দুই দাগে পাঁচ শ’ পেয়ে গেছে। তারপরও যাওয়ার আগে ওর দিকে ফিরে কিছু বলে এবং আমাকে থ্যাংক ইউটিউ বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমি উঠে গিয়ে দরজার ভেতরের লকটাও টিপে দিয়ে আসি।
বসে আছে মেয়েটা একইভাবে ওপাশের বেডের এক কোনে। একেবারে হা হয়ে তাকিয়ে। আমি এসে বসি আমার বিছানায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো সিনারিও বদলে গেলো। মেয়েটা সারা রাতের জন্য এই কক্ষের হয়ে গেলো! একটু ভাবতে হয়, রেখে দিলাম! ঠিক হলো কি! আর কিই বা করতে পারতাম। ও যেতে চাইছিলো না। জোড় করে পাঠাতে পারতাম কি! রাখতে না চাইলে যেতে হতো ওকে। কিন্তু যাওয়ার সময় ওর সে দৃষ্টি কি সহ্য করতে পারতাম। মনে হচ্ছে ভেতরে কোথায় যেন একটু দূর্বলতাবোধ ওর জন্য। হতে পারে বিপদে পড়েছে, আমার সাহায্যপ্রার্থী সে কারনে। বিপদগ্রস্থের প্রতি এক ধরনের সহজাত দূর্বলতাবোধ তো গড়ে ওঠেই মানুষের। কিন্তু এ মেয়েটার প্রতি কি শুধু সে কারনেই আমার এ অনুভুতি! আর কিছু কি নেই। কি সে! একটু ভাবতেই উত্তর পেয়ে যাই, হ্যাঁ ওকে কতটুকু ভালো লাগছে জানি না তবে ওই সুন্দর মুখটার দিকে বারবারই তাকাতে ইচ্ছা করছে। হঠাৎ পরিচয় হওয়া একটা ছেলে একটা মেয়ে এক সাথে একা এক রুমে, ভাবতে এক ধরনের রোমাঞ্চ তো আছেই, তার ওপর সে এখন আমার ওপর সম্পূর্নভাবে নির্ভরশীল। এটাও এক ধরনের ভালো লাগা। হয়তো এটাই সহজাত পুরুষ বৈশিষ্ট।
‘হোয়াই ইউ পেইড হার সো মাচ মানি!’
ওর কন্ঠে তন্ময়তা ভাঙ্গে আমার। তাকাই। একটু হেসে বলি, সো মাচ তো না। মাত্র দুই শ’ ডলার।
তখন দিয়েছো কত!
তিন শ’।
পাঁচ শ’ ডলার দিয়ে দিলে আমার জন্য! বলে বিষ্ময়ে চোখ বড় করে।
বলি, তুমি যে বিপদে পড়েছো পাঁচ শ’ কি সে তুলনায় খুব বেশী টাকা হলো।
এবার হাতদু’টো জোড়বদ্ধ করে আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলে, তুমি আমার দেবতা। ভগবান আমার কথা শুনেছেন। তিনিই তোমাকে পাঠিয়েছেন আমাকে সাহায্য করতে। তোমার এ সাহায্যের কথা আমি কোনদিন ভুলবো না। বলে হাত দু’টো কপালে ঠেকায় প্রণামের ভঙ্গিতে।
আমি তাকে সহজ করতে বলি, ‘ইটস্ অল রাইট। টেক ইট ইজি।’
তারপরও বলে চলে, চেনা জানা নাই, কোথাকার এক জনের জন্য তুমি এতগুলো টাকা দিয়ে দিলে, বিনিময়ে তার কাছ থেকে কিছুই পাবে না জেনেও। আমি বিশ্বাষ করতে পারছি না পৃথিবীতে এমন লোকও আছে!
এবার একটু হেসে বলি, আসলে ভগবান বলে কেউ একজন হয়তো আছে। নইলে দেখো, তুমি সে সময় রাস্তায় এসে দাঁড়াবে কেন আর আমিই ঠিক ওই মূহুর্তে ওখান দিয়ে যাবো কেন!
একটু সন্দিগ্ধ কন্ঠে শুধায়, তুমি ভগবানে বিশ্বাষ করো না?
মাঝে মাঝে করতে হয়। এই যেমন এখন করছি। বলে একটু হেসে উঠি। পরিবেশটাকে সহজ করতে বলি, এখন তুমি নিশ্চিন্ত হতে পারো। মহিলা আর বিরক্ত করতে পারছে না।
সে কথায় না গিয়ে বলে, আমি কি আমার ভগবানকে একটু পা ছুয়ে প্রণাম করতে পারবো!
হঠাৎই মাথায় ঢোকে না কি বললো। পরমূহুর্তে বুঝি। হেসে বলি, ভগবানকে পা ছুয়ে প্রণাম করবে মন্দিরে গিয়ে। এখানে তোমার সামনে একজন মানুষ আছে। সে ভগবান নয়, বুঝলে!
ভগবান যে সেই মানুষটার রূপ ধরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে!
পরিবেশটাকে হালকা করতে একটু হেসে বলি, ভগবান কিন্তু কিছু খায় না। আমাকে ভগবান বানিয়ে না খেয়ে বসে থাকতে বলো নাকি! আমার এখন হালকা ক্ষিধে পেয়েছে। তুমি কি কিছু খাবে? কুকিস ফ্রুটস সোডা। বলে উঠে গিয়ে টেবিল থেকে ফ্রুট স্ন্যাক্সের ট্রেটা নিয়ে আসি।
আমার বলার ভঙ্গিতে ও-ও একটু হাসে। বলে তার কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না। আমি যেন খাই। টেনশনে নাওয়া খাওয়া সব ভুলে গেছে সে।
দু’টো আপেল তুলে নিয়ে টিস্যুতে মুছতে মুছতে বলি, এখন তো টেনশন কিছুটা কমা উচিত।
হ্যাঁ, শুধু কমেছে না, মনে হচ্ছে আমি সকল দূর্ভাবনা থেকে মুক্ত। আমার ভগবান এসে গেছে যে-। একটু চুপ থেকে হঠাৎ আমার দিকে ফিরে বলে, আমি তোমার টাকাগুলো ফিরিয়ে দেবো।