ইন্ডিয়ান গার্ল!’ পার্ট-১৩
সে কথায় না গিয়ে বলি, আচ্ছা শোনো, তোমার এলাকার লোকজন জানে মহিলাটি খুব ভালো মানুষ, তাই না?
তাকায় আমার দিকে। চোখদু’টো তোলা। বড় অদ্ভূত সুন্দর লাগে ওর সে চাহনী। আসলে মেয়েটার চোখে কি যে সম্মোহনী, যে ক’বার তাকিয়েছে এভাবে, আমি এক ধরনের এলোমেলো বোধ করেছি ভেতরে। চোখ ফিরিয়ে নিতে হয়েছে। তাকিয়ে থাকতে পারিনি। এখনও যেন খেই হারিয়ে ফেললাম।
বলে, হ্যাঁ।
এখন যদি তাকে এ বলে ভয় দেখাও যে ভালোয় ভালোয় তোমার পাসপোর্ট টিকেট ফেরত না দিলে তুমি তাকে সেখানে এক্সপোজ করে দেবে, মনে করো এতে কাজ হবে?
একটু চুপ থেকে বলে, আমি ইতিমধ্যেই তাকে সে ভয় দেখিয়েছি।
তাতে কি বলে সে?
বলে ওসব সে কেয়ার করে না। উল্টো এমনটি করলে সে আমাকে আমার এলাকায় পরিবারের কাছে রুইন্ড করে দেবে।
কিভাবে?
বলবে, হংকং এনেছিলো গার্মেন্টসয়ে কাজ দিতে। কিন্তু এখানে এসে আমি তার কথা না শুনে বেশী টাকা কামাতে প্রস্টিটিউশন বেছে নিয়েছি। অনেক লোকের শয্যাসঙ্গী হয়েছি। এখন নিজে ভালো মানুষ সাজতে তার নামে বানিয়ে মিথ্যা বলছি। যেহেতু তার নামে এমন কোন বদনাম নাই, লোকে তার কথা বিশ্বাস করবে।
হুঁ । পাকা বুদ্ধি। বলি, তুমি কি মনে করো সে তা করতে পারবে?
বলে, আমি জানিনা। হয়তো। আমাদের সমাজটা খুবই রক্ষনশীল, গোড়া। ধর্মীয় মূল্যবোধ খুবই প্রবল। এবং এ সাবজেক্টটা খুবই মুখরোচক। আর খারাপ কথা খুব দ্রুত ছড়ায়। লোকে তা শুনে মজা পায় বলে বিশ্বাসও করে। সে জন্যেই সে বলে, আমি যদি তার কথা শুনে এখানে আয় করে টাকাটা দিয়ে দেই সে আমার কোন ক্ষতি করবে না।
তাহলে তুমি কেন তাকে বলো না দেশে ফিরে গিয়ে টাকা শোধ করে দেবে।
সে কথাও বলেছি। কিন্তু তা সে বিশ্বাষ করে না। সে আমাদের পরিবারকে জানে। তার ধারনা দেশে গেয়ে আমি কোনদিনই টাকা শোধ করতে পারবো না। থামে এতটুক বলে। হঠাৎ বলে ওঠে, আমি কি পাসপোর্ট টিকেট ছাড়া আর কোনভাবেই ফিরে যেতে পারি না?
বলি, না। এ দেশ থেকে বের হতে, প্লেনে চাপতে, ভারতে গিয়ে ঢুকতে ওই ডকুমেন্ট লাগবেই।
একথা শুনে যেন ভেঙ্গে পরে কিছুটা। অসহায়ের কন্ঠে বলে ওঠে, তাহলে আমি কি করে ফিরে যাবো! সে তো ওগুলো দেবে না!
একটু ভেবে নিয়ে বলি, সেটা যদি হয় তুমি এখানকার ভারতীয় কনস্যুলেট থেকে পাসপোর্ট রি-ইস্যু করাতে পারো।
বুঝতে না পেরে তাকায় মুখের দিকে। ব্যপারটা ওকে বোঝাই। হংকংয়ে ভারতীয় কনস্যুলার অফিসে গিয়ে লস্ট দেখিয়ে আবেদন করলে তারা নতুন পাসপোর্ট দেবে। তবে তার জন্য অনেক কাগজ আনাতে হবে দেশ থেকে। এতে সময় লাগবে। ওদিকে তার ভিসা আছে মাত্র কয়েক দিনের। এর মধ্যে সব কাগজ তৈরী করে তাকে হংকং ছাড়তে হবে। নইলে পনেরো দিন পর অবৈধ হয়ে যাবে এখানে। এরপর যখনই ফিরতে যাবে এয়ারপোর্টে অনেক ঝামেলা সামাল দিতে হবে। সব চেয়ে বড় কথা দেশ থেকে কাগজপত্র আনাতে হলে বাবা মাকে জানাতে হবে। খুলে বলতে হবে সব কথা। শুধাই, সে কি দেশে কথা বলেছে এর মধ্যে।
বলে, এয়ারপোর্ট থেকে নেমে রুমে আসার পর একবার মহিলা লাইন লাগিয়ে দিয়েছিলো। শুধু জানিয়েছে ভালোমতো এসে পৌছার কথা। এরপর আর লাইন দিয়ে দেয়নি। সে জানেনা কিভাবে এখান থেকে চেন্নাই ফোন করতে হয়। এসেছে থেকে মহিলা তাকে রুমের বাইরেই বের করেনি।
বলি, আচ্ছা ঠিক আছে, কাল আমি তোমাদের কনস্যুলার অফিসে ফোন করে দেখি, পাসপোর্ট রি ইস্যুর ব্যপারে কি কি ফর্মালিটিজ।
কোন কথা বলেনা। মাথা নীচু করে থাকে।
শুধাই, কোন এয়ারলাইনে এসেছো?
ড্রাগন এয়ার। বলে মুখ তোলে।
কবে এসেছো? তারিখ মনে আছে?
আঙুলে গুনে বলে, সম্ভবত চৌদ্দ তারিখে।
ওকে। কাল এয়ার লাইনেও কল দেবো। লস্ট টিকেট রি ইস্যু করে কিনা জেনে নেবো। আমার ধারনা ওরা তা করে।
এবার চোখমুখে এক ধরনের আশার ভাব ফুটে ওঠে। বলে, আমি জানি তুমি একটা পথ বের করে ফেলতে পারবে। আমি আমার সঠিক দেবতাকে খুঁজে পেতে ভুল করিনি।
আচ্ছা শোন এসবই হচ্ছে সেকেন্ড অপশন। প্রথমে আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে মহিলার কাছ থেকে কাজ উদ্ধারের। অনুরোধে কাজ না হলে পুলিশের ভয় দেখাতে হবে। অবশ্য এতে একটা রিষ্ক আছে।
সেটা কি রকম?
সে নিজে হঠাৎ গায়েব হয়ে যেতে পারে।
যেন ভয় পেয়ে যায়। বলে, তাহলে!
এমনটি ঘটলে আমাদেরকে সেকেন্ড অপশনে যেতে হবে। তবে পালিয়ে গেলেও তার শেষ রক্ষা হবে না। পুলিশ তাকে ঠিকই খুঁজে বের করবে।
থানা পুলিশ কেস-কাবারির কথা শুনে এবার আসলেই ভীত হয়ে পড়ে। বলে, আমাকেও পুলিশ এ্যরেস্ট করবে!
ওকে স্বাভাবিক করতে হেসে উঠি। বলি, নো ওয়ে। তুমি তো ভিকটিম। ওরা তোমাকে প্রটেকশন দেবে। সে যাই হোক, আমার ধারনা সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে। তবে কিভাবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত নই।
শুনে একটু স্বাভাবিক হয়। তবে আবার ভাবনায় পড়ে যায়। আমি তখন ভাবছি আর এক কথা। হঠাৎ বলে উঠি, অবস্থা বেগতিক দেখলে মহিলা কিন্তু তোমাকেই গায়েব করে দিতে পারে।
ও মাই গড্! বলে আঁতকে ওঠে।
বোঝাই, এ ধরনের মহিলারা খুবই ডেয়ারিং টাইপের হয়। এদের হাতে গুন্ডাগোছের লোকও থাকে। তাদেরকে দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে ওকে।
এবার যেন আর্ত্তনাদ করে ওঠে, আমাকে মেরেও ফেলতে পারে?
তা বলতে পারবো না। তবে অন্য দেশে বিক্রি করে দিতে পারে।
‘ও নো’ বলে যেন ভেঙ্গে পরে।
সান্তনা দিতে বলি, ভয়ের কিছু নাই। তুমি এখন আমার কাছে আছো। আমি বলছি তার এবং আমাদের সম্ভাব্য করনীয়গুলো। তার মানে এটা নয় যে এর সবই ঘটবে। এখন সহজ হও।
কষ্টে সামলায় নিজেকে। আঁচলে চোখ মোছে। ছেলেমানুষের মতো বলে ওঠে, তুমি আমার সঙ্গে থাকবে না!
হেসে দেই বলার ভঙ্গিতে। বলে চলে, প্লিজ আমাকে ত্যাগ কোর না। তুমি আমার ভগবান। বলে আবার হাত দু’টো জোড় করে তুলে ধরে। এবার আর নামায় না সহসা। চেয়ে থাকে চোখের দিকে করুন দৃস্টিতে।
এক ধরনের বিব্রত বোধ হয় ওর ওই দৃষ্টির সামনে। একটু বেশীই গুরুত্ব দিয়ে ফেলছে আমাকে। আমি কোন ভগবান টগবান নাই। ছোটখাট ব্যবসায়ী। এ দেশ থেকে সে দেশে ঘুড়ে বেড়াই ব্যবসার কাজে। এসব সফরে মাঝে মাঝে নানা পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কিন্তু এবার হংকং এসে এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ভালোই লাগছে। কেমন একটু থ্রিলিং থ্রিলিংবোধ। রহস্যোপন্যাসের ক্লাইমেক্স সীনে আছি যেন। রাত পোহালেই অপারেশন। এখন বসে বুদ্ধি আঁটছি। তবে ভালো লাগছিলো ঘটনার নায়িকা একটা সুন্দরী মেয়ে!
হ্যাঁ, সুন্দরী তো বটেই। ভারতের সাউথের মেয়েদের চেহারায় এক ধরনের কমনীয়তা আছে। আদি দ্রাবিরের বংশধর। মেয়েগুলো গড় লম্বা। শুকনোমতো। যাকে বলে শ্লিম। বোম্বের বেশ কয়েকজন নায়িকাই সাউথ থেকে এসে নাম করেছে। তামিল ছবিতেও দেখা যায় নায়কগুলো সব এক একটা গাবের বস্তা, কিন্তু মেয়েদের এক ধরনের ভিন্ন সৌন্দর্য্য। এ মেয়েটার মুখের শেপে কোথায় যেন এক আলাদা আকর্ষন। তবে সবচেয়ে আকর্ষনীয় হচ্ছে ওর চোখদু’টো। গভীর কালো তারায় কি যেন দ্যুতি। যেন সব সময়ই কিছু বলছে সে চোখ। না, সুন্দরী বলতে আমরা যা বুঝি এ মেয়ে তেমনটিই।