সতীর্থরা তাকে দিয়েছিলেন গার্ড অব অনার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রশংসার স্তুতি ভাসিয়েছিলেন তামিম, মুশফিক, সাদমানরা। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর নিয়ে একবারও মুখ খোলেননি। বারবার তাকে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও এড়িয়ে গিয়েছেন। অবশেষে চার মাস পর নিজের অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের ৫০তম টেস্ট খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ওই ম্যাচের মাঝপথে ড্রেসিংরুমে নিজের সতীর্থদের অবসরের সিদ্ধান্ত জানান তিনি। কিন্তু গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করছিলেন না। কেন? সেই উত্তরটাও অজানা ছিল। বুধবার (২৪ নভেম্বর) বিসিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাহমুদউল্লাহ নিজের অবসরের ঘোষণা দেন।
১২ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন ৩৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে মাহমুদউল্লাহ দলে ফেরেন ১৬ মাস পর। ফিরেই ১৫০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেছেন। শেষটা রাঙালেও তার ক্যারিয়ার অনেকটাই বিবর্ণ। ৫০ ম্যাচে ৯৪ ইনিংসে রান ২৯১৪। ৩৩.৪৯ গড়ে ৫ সেঞ্চুরি ও ১৬ হাফ সেঞ্চুরি আছে তার নামের পাশে। এছাড়া ৬৬ ইনিংসে বোলিং করে ৪৩ উইকেট নিয়েছেন।
নিজের অবসর নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘যে ফরম্যাটে আমি দীর্ঘদিন ধরে ছিলাম সেটা ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়। আমি সবসময়ই উচুঁতে যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম এবং আমি বিশ্বাস করি এটাই আমার টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করার সঠিক সময়।’ তিনি আরো বললেন, ‘আমি টেস্ট দলে ফিরে আসার পর আমাকে সমর্থন করার জন্য বিসিবি সভাপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমাকে সবসময় উৎসাহিত করার জন্য এবং আমার ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস করার জন্য আমার সতীর্থদের ও সহায়তা কর্মীদের ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারাটা একটা পরম সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয় এবং আমি অনেক স্মৃতি মনে রাখব।’
সাদা পোশাকে মাহমুদউল্লাহ নিজেকে সরিয়ে রাখলেও সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে উজার করে দিতে চান। তার ভাষ্য, ‘যদিও আমি টেস্ট থেকে অবসর নিচ্ছি, তবুও আমি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি খেলব এবং সত্যিই আমার দেশের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকব।’
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে বলা হয়েছিল মাহমুদউল্লাহকে। বাদ দেওয়া হয়েছিল লাল বলের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। ১৬ মাস পরে টেস্ট দলে আকস্মিকভাবে সুযোগ পান তিনি। জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য টেস্ট দলে তিনি ছিলেন না। কিন্তু সফরে যাওয়ার আগে দলের শীর্ষ দুই ব্যাটসম্যান ইনজুরিতে থাকায় তাদের সম্ভাব্য ব্যাকআপ হিসেবে তাকে নেওয়া হয়। দলে ফিরে একাদশে সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেন।
প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করে ১৫০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন। এই সেঞ্চুরির পরই সতীর্থদের কাছে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজের অবসরের সিদ্ধান্ত জানান।
টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ওই ইনিংসে মিলেছে প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। দলও জিতেছে। নিজের ব্যক্তিগত অর্জনও হয়েছে। এর চাইতে বেশি কিছু মাহমুদউল্লাহ আর কী প্রত্যাশা করতে পারেন? সব মিলিয়ে মাহমুদউল্লাহ বেশ তৃপ্ত। তবে দল জেতায় এবং সবার মুখে হাসি থাকায় তার আনন্দ বেশি।