শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই দেখা দিলো মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়েও বিপজ্জনক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কোভিড জীবাণুর সবচেয়ে বেশি মিউটেট হওয়া সংস্করণই হচ্ছে ওমিক্রন। এ কারণেই একে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যদিও ভয়াবহ এই ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশে সবচেয়ে বেশি। তারপরও ধারণা করা হচ্ছে, এটি বিশ্বের সব স্থানেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, গ্রিক বর্ণমালার আলফা, ডেল্টার মতোই নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের কোড নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই ভ্যারিয়েন্টটি মিউটেট বা তার রূপ পরিবর্তন করেছে অনেকভাবে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কেন এতটা ভয়াবহ? এ বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলছেন, ‘এখন পর্যন্ত করোনার অন্য যেসব ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে, তার চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট অনেকখানি বিপজ্জনক। এতটাই বিপজ্জনক যে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট তার রূপ পরিবর্তন করেছে ৫০ বার।’
টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, ‘এর স্পাইক প্রোটিন বদলেছে ৩০ বার। মানুষের দেহের মধ্যে ঢুকতে করোনাভাইরাস এই স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে। করোনার ভ্যাকসিন সাধারণত এই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়। ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় তার নাম রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সেই রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইনে মিউটেশন ঘটিয়েছে ১০ বার। সেই তুলনায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই পরিবর্তন হয়েছে মাত্র দুই বার।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণ:
চিকিৎসকদের মতে, ওমিক্রনের কিছু লক্ষণ আছে, যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদিও আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনের লক্ষণ হালকা মিলেছে। আবার কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই সুস্থ হয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েজি বলেছেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন উপসর্গের মধ্যে দেখা গেছে চরম ক্লান্তি, গলাব্যথা, পেশিব্যথা ও শুকনো কাশি। একই সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে এর লক্ষণগুলো বেশ ভিন্ন।’
ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েজি আরও জানিয়েছেন, তিনি এখন পর্যন্ত যত রোগী দেখেছেন, তাদের সবার টিকা নেওয়া হয়নি। তাদের ওমিক্রনের হালকা লক্ষণ ছিল। ইউরোপের বিপুল সংখ্যক মানুষ করোনার এই নতুন প্রজাতি দ্বারা সংক্রামিত। এখন পর্যন্ত ওমিক্রন দ্বারা সংক্রমিত বেশিরভাগ রোগীর বয়স ৪০ বছরের কম।
আরও একটি বিষয় হলো—ডেল্টা আক্রান্তদের মতো ওমিক্রনে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়নি। এমনকি এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে করোনা রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও হঠাৎ নেমে যায়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলছেন, ‘এই ভাইরাসটির সংক্রমণের ক্ষমতা শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও সম্ভবত এর আছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে বেটা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সবাই দুর্ভাবনায় ছিলেন। এরপর দেখা গেলো, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর চেয়েও দ্রুত গতিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেন, ‘বেটা ভ্যারিয়েন্ট শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করতে পারত। ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা ছিল বেশি। তবে, ওমিক্রন দুই দিক দিয়েই সমান পারদর্শী।’
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গটেং প্রদেশে। বতসোয়ানায় পাওয়া গেছে চারটি কেস ও হংকংয়ে পাওয়া গেছে একটি কেস। ইসরায়েল ও বেলজিয়ামেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।