মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) জনগণকে সরকার বিরোধী কাজে উসকানি দেওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। কিন্তু এরপরও তার বিরুদ্ধে এখনো অনেক মামলা চলমান রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং দেশটির টেলিকম আইন না মানার মতো গুরুতর বিষয়গুলি। আর এই অভিযোগের সবকটি প্রমাণিত হলে তাকে ১০০ বছরের বেশি কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।
২০১৫ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয় লাভ করে অং সান সু চি’র রাজনৈতিক দল এনএলডি। পরে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা নিয়ে দরকষাকষি শুরু করেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে দেশটির পার্লামেন্টে নতুন একটি আইন পাসের মাধ্যমে পদ সৃষ্টি করে তাকে স্টেট কাউন্সিলর (রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা) নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পদটি প্রধানমন্ত্রীর পদের মতো হলেও ক্ষমতা ছিল প্রেসিডেন্টের চেয়েও অনেক বেশি।
পার্লামেন্টে এমন একটি পদ সৃষ্টি করায় হওয়ায় সেনাবাহিনীকে চরমভাবে নাড়া দেয়। কারণ মিয়ানমারের পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর জন্য রক্ষিত আসানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকেই অং সান সুচি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন।
কিন্তু ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগণের ওপর নিধন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। অভিযান থেকে বাঁচতে সে সময় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতে পালিয়ে যায়। ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ শরণার্থী সংকট তৈরি হয়। কিন্তু মিয়ানমারের নেত্রী রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এ বিষয়টিকে বরাবরই এড়িয়ে গেছেন। এক সময় শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য সোচ্চার থাকলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথম থেকেই নীরব থাকেন অং সান সু চি। ফলে তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
এমনকি মানবতা এবং গণতন্ত্রের জন্য তাকে দেওয়া একের পর এক পুরস্কার বাতিল ও প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো।
২০২০ সালের নির্বাচনেও জয় পায় এনএলডি। পরেরর বছর ১ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগে অং সান সু চি এবং তার দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। অং সান সু চিকে সে সময় গৃহবন্দি করা হয়। পরে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, কারচুপি করে ২০২০ সালের নির্বাচনে অং সান সু চির দল জয় পেয়েছে। সূত্র: ব্রিটেনিকা, আল-জাজিরা, রয়টার্স।