‘শিক্ষার কোন বয়স নাই, চল সবাই পড়তে যাই’- পুরোনো এই প্রবাদটি প্রমাণ করে দেখালেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম।
৫৭ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পাস করে সাড়া ফেলেছেন আশপাশে। ইউপি সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই এসএসসি পাস করায় আলোচনায় রফিকুল।
চতুর্থ ধাপে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড থেকে সাধারণ সদস্য পদে তালা প্রতীক নিয়ে ৪৭৩ ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত হয়েছেন মো. রফিকুল ইসলাম। এর আগে ২০১৬ সালে প্রথম ইউপি সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) এসএসসির ফল প্রকাশের পর জানতে পারেন জিপিএ ৪.৪৬ পেয়ে তিনি পাস করেছেন।
ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ৪৫ বছর আগে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় লেখাপড়া বন্ধ হয়। পরে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। তবে বরাবরই তার লেখাপড়া প্রতি আগ্রহ ছিল।
রফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ আছিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণির ছাত্র। পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আবারও তিনি ছেলের সাথে পড়ার টেবিলে যোগ দেন। ২০১৮ সালে ভর্তি হন ছনকান্দা ড. আবুল হোসেন ইবনে সাঈদ কারিগরি বিদ্যালয়ে।
রফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, বাড়ি থেকে বাবা-ছেলে একসঙ্গে যখন বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস করতাম; গ্রামের মানুষ তা দেখে হাসাহাসি করত। কিন্তু তাতে বাবা থেমে থাকেননি। তিনি তার লক্ষে পৌঁছেছেন। এই বয়সে বাবার আগ্রহ দেখে আমারও পড়ার প্রতি মনোযোগ আরও বেড়ে গেছে।
ছনকান্দা ড. আবুল হোসেন ইবনে সাঈদ কারিগরি বিদ্যালয়ে শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, রফিকুল যখন নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় তখন অনেকটা অবাক হয়েছিলাম। তবে শুরু থেকে লেখাপড়ার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল তার। আমরা তাকে উৎসাহ দিই। বলি, লেখাপড়া করার কোন বয়স নেই। তার ফলাফল শুনে আমাদেরও ভালো লাগছে।
একই এলাকার শহিদুল হক বলেন, রফিকুল ইসলাম খুব ভাল মনের মানুষ। সে ইউপি সদস্য পদে পাস করে মানুষের জন্য কাজ করেছে। তার এসএসসি পাসের বিষয়টি আমাদের অবাক করেছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, লেখাপড়া না করলে এটার গুরুত্ব বোঝা যায় না। আমার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করার। ছোটবেলায় সুযোগ হয়নি, তাই এই বয়সে করছি। এবার আমি কলেজ ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাব।